শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
spot_img

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা, আলোচনায় যারা

সংবাদ১৬.কমঃ দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘোষণা হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। জেলা বিএনপির একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। এর আগে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি পদে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম ফারুক খোকন ঘোষিত হন। এরপর থেকে এ দুইজনকে দিয়েই চলে আসছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যক্রম। সম্মেলনের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ঘোষণা করা হচ্ছিল না পূর্ণাঙ্গ কমিটি। যা নিয়ে চলছিল আলোচনা। এরই মধ্যে দুদিন আগে ঘোষণা হয় জেলা যুবদলের এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের নতুন আহবায়ক কমিটি। এরপরই সুখবর হয় জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়টি।

৩০ আগস্ট কেন্দ্র থেকে আগামী ৫ দিনের মধ্যে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের খসড়া তালিকা পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে। সে হিসেবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই তালিকা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে দিতে হবে। এদিকে এই কমিটির তালিকা গঠনে জেলা বিএনপিকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে একাধিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে জেলা বিএনপির অধীনস্ত কোন ইউনিট কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারবেন না। তারা শুধুমাত্র জেলা বিএনপির সদস্য পদে থাকতে পারবেন। এছাড়া যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে যোগ্য নেতাদের কমিটিতে জায়গা দিতে হবে। তবে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের এখনো এই বিষয়ে কোনো চূঢ়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। গত ৩০ আগস্ট পালন করা মৌন মিছিল এবং ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা নিয়ে তারা ব্যস্ত। কমিটি গঠনে এখনো তাদের কোনো মিটিং হয়নি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার পর তারা কমিটির বিষয়ে সবার সঙ্গে বৈঠক বসবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের খবরে আনন্দের ঢেউ বইছে জেলা বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের মধ্যে। অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। শোনা যাচ্ছে, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। এছাড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার এগিয়ে রয়েছেন। পাশাপাশি সিনিয়র যুগ্ম- সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবের নাম শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক লুৎফর রহমান খোকার নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এবং জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে সদস্যপদে রাখার কথা জানা গেছে। তবে কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত কমিটি ঘোষণা হওয়া না পর্যন্ত কে কোন পদে থাকবেন তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তৃণমূলদের প্রত্যাশা, কোনো স্বজনপ্রীতি করে নয় যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে যোগ্য নেতাদের এই কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে। তাহলে জেলা বিএনপির কমিটি আগের তুলনায় আরও সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি এই কমিটি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রথম সভাপতি হিসেবে আব্দুল মতিন চৌধুরীকে নির্বাচিত করা হয়। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। এরপর ১৯৯২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন রোকন উদ্দিন মোল্লা। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। তারপর ২০০৪ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় চাষাঢ়স্থ শহীদ জিয়া হলে। এই সম্মেলনে জেলা বিএনপি’র সভাপতি নির্বাচিত হন অধ্যাপক রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক হন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারবাদী হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম আলোচনায় থাকায় ২০০৯ সালের ২৫শে নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি’র সর্বশেষ সম্মেলনে তাকে বাদ দেয়া হয়। সর্বশেষ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারায় ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ না দেখায় সাড়ে ৩ বছর পর জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। নির্দেশনা ছিল ৩ মাসের মধ্যে থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এই আহ্বায়ক কমিটি সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। এর মধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমূর আলমকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় মনিরুল ইসলাম রবিকে।

দুই বছরের মাথায় একই বছরের ১৫ই নভেম্বর মনিরুল ইসলাম রবি ও মামুন মাহমুদের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে ১৭ জুন জেলা বিএনপির সভাপতি হন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম ফারুক খোকন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দ্বাদশ নির্বাচন এর আগে আন্দোলনই হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মূল বিষয়। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং শক্তিশালী কমিটি দেয়া উচিত। যারা অতীতে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং রাজপথে আন্দোলন করেছেন তাদেরকে কমিটিতে রাখার কোন বিকল্প নেই। নারায়ণগঞ্জ জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ যায়গা, এ-জেলায় কমিটি করতে গেলে গিয়াস উদ্দিন, আজহারুল ইসলাম মান্নান, দীপু ভূইয়া ও খোকনদের সঠিক যায়গায় দায়িত্ব দিতে হবে।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়