মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
spot_img

দালালের নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজার হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার পাশে টমটম বা অটো গাড়ীর অবৈধ পার্কিং করে মাসে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। পর্যটন নগরী কক্সবাজার হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস গুলো এখন সম্পুর্ন দালালের নিয়ন্ত্রণে।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা হাজার হাজার পর্যটকদের নিয়ে দালালী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল নামের বেশ কয়েকটি প্রতারক চক্র (সেন্ডিকেট)। এতে দুর্নাম হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র নগরী কক্সবাজারের।
কক্সবাজার কলতলী ডলফিন মোড় এলাকায় এসব দালালদের ২৪ ঘন্টায় মহড়া চলছে।

একেরপর এক স্থানীয় বখাটে ছেলেদের ব্যবহার বা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে এসব দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পর্যটকদের যেতে হচ্ছে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউসগুলোতে। দালালদের পছন্দের হোটেলে নিয়ে গিয়ে ৫০% কমিশন ভিত্তিক পর্যটকদের রুম বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব প্রতারক চক্র।

ঢাকা চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকবাহী বাস কলাতলী ডলফিন মোড় নামতেই দেখা যাবে এসব দালালের উতপাৎ । তারা ত্রিশ ,চল্লিশ, টাকার অটো বা টমটম ভাড়ার কথা বলবে প্রথমে, এরপর দশ বিশটা হোটেল দেখার লোভনীয় প্রস্তাব নিয়ে পর্যটকদের পাশে গিয়ে টলি, লাগেজ, বা ব্যাগ নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিবে।

সমুদ্রের পাশে একদম বালিয়াড়িতে বিলাসবহুল কমদামে হোটেলে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে মাথাপিছু বিক্রি করে দেয়। এই কর্মকাণ্ড অনেক পর্যটক খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারলেও বেশি সংখ্যক পর্যটক তা উপলব্ধি করতে পারছেনা। এতে তারা প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এইসব দালালদের নিয়ন্ত্রণে পতিতালয়ে পতিতা বিক্রি ও মাদকের চালানও পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন হোটেল মোটেল জোনগুলুতে।

অনুসন্ধানে জানা যায় যে, কয়েক ডজন মামলার কুখ্যাত সন্ত্রাসী মনু গ্রুপ ও কিশোর গ্যাং নেতা হিরুর নিয়ন্ত্রণে কলাতলী ডলফিন মোড় সংলগ্ন এলাকায় দালালদের সিন্ডিকেটগুলো গড়ে তোলা। মাসিক মাসোহারা বা চাঁদা দিয়েই এমন প্রতারক চক্র গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান কলাতলী বিভিন্ন পেশার মানুষ। এসব দালালদের মাধ্যমে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউসগুলোতে বেপরোয়া তান্ডব চালানোর অভিযোগও অহরহ।

এদিকে একজন পর্যটন ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমান পর্যটন মৌসুমকে কেন্দ্র করে দালাল চক্রের বেপরোয়া হয়রানির কারণে পর্যটকরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। পর্যটকদের কাছ থেকে ছিনতাই হচ্ছে মোবাইল, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন প্রকার গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। দালালদের কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে হরহামেশাই। প্রশাসন যদি এসবের দিকে সুনজর না দেয় তাহলে আগামীতে পর্যটন ব্যবসায় ধস নামার আশংকা প্রকাশ করা যাচ্ছে।

সবচেয়ে বেপরোয়া দালালদের মধ্যে রয়েছে, জাফর, তার ভাই কালু ও মুর্শেদ, মনু গ্রুপের প্রধান বিখ্যাত দালাল ফারুক, মুন্না, হাশেম, রোহিঙ্গা কামাল, ছগির, গফুর, বোরহান, সেলিম , আলম, হাশিম, ইব্রাহিম ও হানিফসহ রয়েছে কয়েকডজন দালাল। তারা পর্যটকদের বিভিন্ন পতিতা ও মাদকের প্রলোভন দেখিয়েও হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাদের এইসব কূকর্মের বিরুদ্ধে কথা বললে যেন নেমে আসে অকাল। মুহুর্তের মধ্যেই বেপরোয়া গুন্ডা বাহিনী এনে রাস্তায় পর্যটকসহ বিভিন্ন মানুষকে লাঞ্ছিত করে।

এদিকে কুখ্যাত সন্ত্রাস মনু বাহীনির প্রধান মনু কারাগারে থাকলেও কিশোর গ্যাং লিডার হিরো ইতিমধ্যে বেপরোয়া হয়ে দালালদের দখলে নিয়েছে। এই বিষয়ে কিশোরগ্যাং নেতা হিরোর কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে মহান নেতার ভাই ও স্থানীয় ছেলে তাই নিজের নিয়ন্ত্রণে এসব চলে। তারপরও প্রতিবেদকের সাথে একান্ত বসার কথা বলে মোবাইল কেটে দেন।

দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশ ইন্সপেক্টর মোঃ দেলোয়ার জানান, প্রতিদিন এসব দালালদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চললেও অগোচরে কিছু কিছু দালালরা এমন কান্ড ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে তাদের প্রতিহত করার সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টায়।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়