![](https://sangbad16.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
রওশন আরা শিলাঃ সোনালি আঁশ খ্যাত পাটে বিখ্যাত নওগাঁর আত্রাই। এ জেলার মধ্যে আত্রাই উপজেলা পাট উৎপাদনে সেরা। গুনে-মানে সেরা আত্রাইয়ের পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। তাই এখানকার কৃষকদের ভালো-মন্দ নির্ভর করে পাট আবাদের সাফল্যের ওপর।
জানা গেছে, নওগাঁর আত্রাইয়ের বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে পাট। সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাটে উৎপাদিত নতুন পাট হাট-বাজারে এনে ভালো দাম না পেয়ে রীতিমতো হতাশ চাষিরা। লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচও যেন উঠছে না। ফলে ফলন ভালো হলেও দাম না পেয়ে হতাশ পাট চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আত্রাই, রাণীনগর, মান্দা, ধারমইহাট, মহাদেবপুর সহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিটি হাটেই নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এবার সময় মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ায় অধিকমূল্যে ডিজেল চালিত শ্যালো পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে জাগ দিতে হয়েছে। অনেকেই পানির অভাবে মাটি খুঁরে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে পাট চাষীদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুন।
পাটের বাজার হিসেবে প্রসিদ্ধ নওগাঁর আত্রাইয়ে আহসানগঞ্জহাট সপ্তাহে বৃহস্পতিবার হাট বসে এবং উপজেলার মির্জাপুর হাট সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুদিন বসে। তাই প্রান্তিক চাষিরা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের উৎপাদিত পাট নিয়ে আসে ঐ সব বাজার গুলোতে। উপজেলার আহসানগঞ্জ হাটে উৎপাদনের ভরা মৌসুমে প্রতিহাটে বিশ হাজার থেকে পঁচিশ হাজার মন পাট কেনাবেচা হয়। বর্তমানে আহসানগঞ্জ হাটে পাটের দাম রয়েছে দুই হাজার দুই শত থেকে দুই হাজার পাঁচ শত টাকা। তবে এ দামে সন্তষ্ট নন চাষিরা।
এদিকে পাট ক্রেতাদের ভাষা, এবার পাটের গুনগত মান সঠিক নেই। পানির সমস্যার কারণে পাটের রং এবার নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে ভালো দামে পাট কিনতে পারছি না আমরা। আত্রাই উপজেলার ঘোষপাড়া গ্রামের বাবর প্রামানিক সাংবাদিককে বলেন, গত বছর যে পাট প্রতিমন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। রং খারাপ হওয়ায় সেই পাট এবার সর্বোচ্চ দুই হাজার থেতে দুই হাজার দুইশত টাকায় বিক্রি করছি। তাও ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছে না। খারাপ মানের পাটের প্রভাবে ভালো মানের পাটেও পড়েছে এর প্রভাব। ভালো মানের পাট দুই হাজার ছয় শত থেকে তিন হাজারের উপরে বিক্রি করতে পারছি না। এতে কাঙ্খিত খরচও উঠবে না। অনেক লোকসান গুনতে হবে।
পাট ব্যবসায়ী আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের ঘোষপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন, গত বছর একমন পাট পঁয়ত্রিশ শত থেকে আটত্রিশ শত টাকা পর্যন্ত পাটের দাম ছিল। তেল ও সারের দামও কম ছিল। কৃষকরা মোটামুটি ভাবে চলতে পারেছেন। তবে এবার পাটের অবস্থা খুবই খারাপ। পানির অভাবে কৃষকরা সঠিক সময় ঠিকমত পাট জাগদিতে পারেনি। মাটি খুড়ে ও নোংরা-পঁচা পানিতে পাট জাগ দেয়ায় পাটের রং কালো হয়ে গেছে। আবার তেল সার ও দ্রব্যমূল্যের দামও বেশি।
তিনি আরো বলেন, আহসানগঞ্জ হাটপাটের জন্য একটি বড় হাট। এখানে সরকারি ও বেসরকারি পাটকল কর্তৃপক্ষের এজেন্ট রয়েছে। তারা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করে থাকে। কিন্তু এবারে পাটের ভালো রং না থাকায় চাষিরা ভালে দর পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সূত্রে জানা যায়, উপজেরায় এবার পাটের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ পঙ্চাশ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে লক্ষমাত্রা ছারিয়ে গেছে। একই সঙ্গে এবার পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারনে একই পানিতে বারবার পাট পঁচানোর কারণে পাটের আঁশের গুনগত মান খারাপ হয়েছে। যে কারনে পাটের দামও কমেছে, কৃষকরাও চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।