শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
spot_img

বিলুপ্ত প্রায় আত্রাইয়ের বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী

রওশন আরা শিলাঃ নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পন্য সামগ্রী। বাজারে প্লাষ্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি পণ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে ওই পণ্য, ফলে এসব পেশার সাথে জড়িত মানুষগুলোকে আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। নিজ পেশার সাথে  টিকতে না  পেরে ভিন্ন পেশায় চলে গেছে উপজেলার পাঁচ শতাধিক শিল্পের কারিগর। পুঁজি স্বল্পতা, বাঁশ ও বেতের উৎপাদন হ্রাস, আর্থিক অসচ্ছতা, উপকরণের অভাবেই আজ বিলুপ্তির পথে।

ঐতিহ্যবাহী বাঁশ বেত শিল্প সারা দেশে একসময় ব্যাপক প্রচলন ছিল বাঁশের তৈরি কুলা, ঝুড়ি, চাটাই, হাঁস মুরগির খাঁচা, বেতের চেয়ার, ধামা, চালুনি, খলই, হাতপাখা। কিন্তু বাজারে প্লাষ্টিক, মেলামাই ও স্টিলের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর চাগিদা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও মাটির তৈরি জিনিষগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

উপজেলার কালিকাপুর, তিলাবাদতুরি, জামগ্রাম, নওদুলী, ঝনঝনিয়া, ব্রজপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকার বংশপরস্পরায় বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবার। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যরাই পেশা বদল করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিত্য নতুন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করে থাকেন যা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এবং গ্রামগঞ্জে কাঁধে ফেরি করে বিক্রি করে থাকে, এমনকি তৈরি এসব কুটির শিল্প সামগ্রী বেশ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই)  আহসানগঞ্জ ইউপি’র ঐতিহ্যবাহি আহসানগঞ্জ হাটে সরেজমিনে গেলে, সিংসাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল, ভাদঘরপাড়া গ্রামের ইনতাজ আলী, মির্জাপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও  নওদুলী গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন জানান, এক সময় তাদের কাছে দশ-বারো জন বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর ছিল। তখনকার দিনে একজন কারিগরের বেতন ছিল প্রতিদিন দুই শত থেকে আড়াইশত টাকা। এখনকার দিনে সে কারিগরের বেতন দিতে হয় চার’শ থেকে পাঁচ শত টাকা। তাও আবার সিজনের সময় পাওয়া যায় না। তারা আরো জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আগে একচি বাঁশের দাম ছিল পঞ্চাশ থেকে ষাট টাকা, সেখানে এখন প্রতিটি বাঁশ কিনতে হয় দুই শত থেকে তিনশত টাকায়। আর  নির্বিচারে বন জঙ্গল উজার হওয়ার ফলে বেত গাছ খুব একটা চোখে পড়ে না। তাই এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলো আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে।

উপজেলার নওদুলি হাট এলাকার শশীকান্ত জানান, কয়েক বছর হলো পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি করছেন। বেত শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করে খুব একটা লাভ হতো না। এখন গতর খেটে কাজ করি, দিনবাদে চার-পাঁচ’শ রোজগার হয়। পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলছি। তবে যে দিন কাজ না থাকে সে দিন অনেক কষ্ট হয়। তবে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়