বুধবার, মে ১৫, ২০২৪
spot_img

মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ১৯ আহত ২৫

শিবচর সংবাদদাতাঃ শিবচর এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ২৫ জন গুরুতর আহত হওয়ার মতো এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।

১৯ মার্চ রোববার সকাল ৮ টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিবচর এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় সড়ক থেকে ছিটকে সংযোগ সড়কের উপর পড়ে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় ১৪ জন। শিবচর হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু হয় ৩ জনের এবং ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে মারা যায় আরো ২ জন। দূর্ঘটনা কবলে পড়ে মোট ১৯ জনের প্রানহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জন গুরুতর আহত। যাত্রীবাহি বাসটিতে ৫৪ টি আসন ছিল। যাত্রী ছিল কমপক্ষে ৬০ জন।

এদিকে দূর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে জেলা প্রশাসন ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়া নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। মাদারীপুর পুলিশ সুপার, শিবচর হাইওয়ে থানা এবং ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, খুলনা থেকে রোববার ভোরে ইমাদ পরিবহন যাত্রীবাহি বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পথে বাগেরহাট, গোপালগঞ্জসহ সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী উঠায় বাসটিতে। সকাল ৮ টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়েতে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এসময় বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে।

নিহতদের মধ্যে শিবচরে থাকা ১৭ জনের মরদেহের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। নিহতরা হলেন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিতোডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো: ইসমাইল-৩৮, গোপালগঞ্জের গপিনাথপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া বাহার-৪২, নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের বকু সিকদারের ছেলে ফরহাদ সিকদার -৩০, গোপালগঞ্জ সদরের শান্তি রঞ্জন মন্ডলের ছেলে অনাদী মন্ডল-৪২ নিহত অনাদি মন্ডল পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। গোপালগঞ্জ সদরের বনগাঁও এলাকার সামসুল শেখের ছেলে মোস্তাক আহমেদ-৩০, গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নশর আলী শেখের ছেলে সবজি শেখ, গোপালগঞ্জ সদরের পাচুরীয়া গ্রামের মো: মাসুদের মেয়ে সুইটি আক্তার-২২, গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কাঞ্চন শেখের ছেলে মো: কবির শেখ, গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি-২০, গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর উপজেলার আমজাদ আলী খানের ছেলে মাসুদ খান-৩২, খুলনার সোনাডাঙার শেখ আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন-৪২, খুলনার চিত্ত রঞ্জন মন্ড‌লের ছে‌লে চিন্ময় প্রসন্ন মন্ডল, খুলনার ডুমু‌রিয়া উপ‌জেলার প‌রিমল সাধুর ছে‌লে মহা‌দেব কুমার সাধু, খুলনার টু‌টপাড়ার শাজাহান মোল্লার ছে‌লে আশরাফুল আলম লিংকন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রা‌মের আম‌জেদ আলী সরদা‌রের ছে‌লে রা‌শেদ সরদার, ব্রাহ্মনবা‌ড়িয়া জেলার কসবা উপ‌জেলার অনন্তপুর গ্রা‌মের আলী আকব‌রের ছে‌লে জা‌হিদ।

এছাড়াও শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাইদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, আরিফ শেখ, মো.মাসুদ, হানিফসহ কয়েকজন। দূর্ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে শিবচর পাঁচ্চর এলাকার বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থেকে আসা যুবক উজ্জল বলেন, গাড়িটি শুরু থেকেই দ্রুত গতিতে চলছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিল। কেউ চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছিল। দূর্ঘটনার সময় কিছুই টের পাইনি। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি চারপাশে রক্ত এবং লাশ। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে কিছুটা সুস্থ্যতাবোধ করলে চারপাশে বোঝার চেষ্টা করি। তখন টের পাই ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটে গেছে! সড়ক থেকে গাড়ি উল্টে নিচে পরে দূমড়ে-মুচড়ে গেছে।

শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ জানতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্বব কুমার হাজরার নেতৃত্বে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদসরা হলেন, মনিরুজ্জামান ফকির, বিপিএম,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মাদারীপুর,শাহনেওয়াজ ই- রাব্বি সহকারী অধ্যাপক, এ আর আই বুয়েট এবং মাদারীপুর বি আর টি এর সহকারী পরিচালক নুরুল হোসেন। এদিকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ৫ হাজার টাকা করে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম এতথ্য জানিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, শিবচরে নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১৪ জনের মরদেহ বিকেল ৪ টার মধ্যে তাদের আত্মীয় স্বজনরা বুঝে নিয়েছেন। বাকিদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানিয়েছেন, অতিরিক্ত গতির কারণেই দূর্ঘটনাটি ঘটেছে। বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণেই বাসটি এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি সরাতে ঘটনাস্থলে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল আইজি সাহাবুদ্দিন খান, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি হাবিবা বিনতে সালমা, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসন।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়