শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
spot_img

নানা-নাতির সন্ত্রাসী তান্ডব, দুই মাসে থানায় ১২ অভিযোগ

সংবাদ সিক্সটিনঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বারদী ইউনিয়নের আলগীর চর এলাকার মৃত গণি ফকিরের ছেলে চিন্হিত  ডাকাত সর্দার হযরত আলীর নেতৃত্বে একই এলাকার আমিনের ছেলে কথিত ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল রাজ ও তার কিশোর গ্যাং বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।  জানা গেছে, তাদের মধ্যে  নানা-নাতির সম্পর্ক। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় ওই  এলাকায়  ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে নানা-নাতি, তৈরি করেছে কিশোর গ্যাং।

জুয়েল রাজের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা-সহ  ডাকাত সর্দার হযরত আলীর বোন মমতাজের ঘরে প্রতিদিন বসে জুয়ার আসর। প্রতিবাদ করলে সাধারণ মানুষকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় অপকর্মে লিপ্ত বিএনপির ছাত্রদল থেকে উঠে আসা ডাকাত সর্দার হযরত আলীর নাতি ও কথিত ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল রাজ। তার নানা হযরত আলী সাবেক  বারদী  ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক,  তারা মূলত সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ, প্রয়োজনে দল বদলায়, যেন ধান কেটে এখন নৌকা চালায়।

বিগত ২৫ বছর যাবত তাদের নানা-নাতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। স্থানীয় প্রশাসন ও এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অতিষ্ট আলগীরচর গ্রামবাসী। সম্প্রতি পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বিকালে আলগীরচর এলাকার ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমানের মেয়ের জামাই বকুল, তার স্ত্রী ও তাদের একমাত্র সন্তানকে সাথে নিয়ে বারদী দলরদী ছটাকিয়া ঘুরতে গেলে পূর্ব-পরিকল্পিত ভাবে  উৎ- পেতে থাকা ডাকাত সরদার নানা হযরত আলীর নির্দেশে নাতি জুয়েল রাজের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংরা ৪ বছরের শিশুসহ তিন জনকেই পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।

এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে চার মহল্লার মানুষ একত্রিত হয়ে নানা-নাতির সন্ত্রাসী বাহিনীকে ধাওয়া দিলে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। ধাওয়া খাওয়ার একঘন্টা পরে নিজেদের বাড়ি-ঘরে নিজেরাই ভাংচুর চালায়।  এ ঘটনায় এলাকার ২৫ জনকে আসামী করে থানায় ভাংচুর ও লুটপাটের  মামলা দেয়। পরদিন শুক্রবার সকালে ঘটনার জের ধরে আলগীরচর গ্রামের অটো চালক মনির হোসেনকে তাদের বাড়ির সামনে একা পেয়ে হযরত বাহিনী এলোপাথারী কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। গুরুতর আহত মনির হোসেন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বিগত দুই মাসের মধ্যে আলগীরচর এলাকার ১৫ জন নিরিহ মানুষকে মারধর করলে সোনারগাঁ থানায় একাধিক লিখিত অভিযোগ হলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নেয়নি কোন ব্যবস্থা। এলাকাবাসীর দাবী ডাকাত সর্দার  হযরত আলী বাহিনী ও কথিত ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল রাজের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা না নিলে ওই এলাকায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।

নানা-নাতির বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় এলাকাবাসীর অভিযোগ কপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসী বলেন, আমরা হযরত ও  তার নাতি কথিত ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল রাজ এবং তার কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে চাই। তারা জানান, সন্ত্রাসী ও ডাকাত সর্দারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা অতিশীঘ্রই মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেবো। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবো।

ডাকাত সর্দার হযরত আলী ও তার নাতি কথিত ছাত্রলীগ নেতা জুয়েলের  বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানায়, হযরত আলী ও তার বাহিনী এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে আমরা এলাকায় ঠিকমত চলা ফেরাও করতে পারছিনা। হামলা, চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায় তাদের বাহিনী। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এ বাহিনীর অত্যাচারে বারদী ইউনিয়নের আলগীরচর  গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। প্রশাসন ও স্থানীয় এমপি’র কাছে এলাকাবাসীর দাবী তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হোক।

উল্লেখ্য, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে গত ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ওই এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলন করে জুয়েল রাজ। সেখানে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী সম্মানহানী করতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এসময় তিনি বলেন, গত ১ নভেম্বর ২০২৩ ইং উপজেলা বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক করিম রহমানের বাড়িতে বর্তমান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গিয়েছিলো, আমি শুধু ছাত্রলীগকে তার বাড়িটা চিনিয়ে দিয়েছিলাম। সেদিন বিএনপি নেতা করিম রহমানের বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে বলে জানা গেছে।

কথা হয় ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রাসেদুল ইসলাম রাসেলের সাথে। তিনি বলেন, ১ নভেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে বিএনপি নেতা করিম রহমানের বাড়িতে ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মীর পদচিহ্ন’ই পড়েনি। বাড়িঘর ভাংচুর করার কোন প্রশ্নই আসেনা! ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমি বরাবরই স্বচ্ছতার সহিত রাজনীতি করি, আমি আওয়ামীলীগ তারা বিএনপি। রাজনীতিতে ভিন্নতা মানে এই নয় যে, মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতি করা। তিনি বলেন, জুয়েল রাজ একজন খারাপ প্রকৃতির লোক, তার বিরুদ্ধে ওই এলাকার অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

এবিষয়ে উপজেলা বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক করিম রহমান বলেন, গত বছর নভেম্বরের ১ তারিখ আমার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর হয়েছিলো এ কথা সত্যি, কিন্তু সেদিনের ঘটনায় আমি ছাত্রলীগের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক কাউকে দেখিনি। তারা কেউ আমার বাড়িতে হামলা বা ভাংচুরের সাথে জড়িত ছিলনা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় অযথা মানুষকে দোষারোপ করা আমার মানষিকতায় নেই।

অভিযুক্ত বারদী ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রাজের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তার বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা। আমি রাজনীতি পছন্দ করি কিন্তু প্রতিহিংসা পছন্দ করিনা।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়