সোমবার, মে ২০, ২০২৪
spot_img

সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে বিক্রি হচ্ছে বিএনপির ৮০ সংস্কারপন্থী নেতা

সংবাদ ডেস্কঃ আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা সমীকরণের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা শঙ্কা। নির্বাচন হবে কি হবে না এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জোর আলোচনাও। সরকার যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করেই ফেলে তাহলে বিএনপির অবস্থান কি হবে- এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে নানা মত। তবে খোদ বিএনপিতেই আলোচনা আছে সরকার তাদের দলের একটা অংশকে নিয়ে নির্বাচন করার “ষড়যন্ত্র” করছে। দলের ৭২ থেকে ৮০ জন নেতাকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য কয়েক মাস ধরে তৎপরতা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।

সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপির ৮০ নেতা ফসকে যাচ্ছেন বলে চাউর হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের “টোপ” গিলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা। আসন্ন এ নির্বাচনকে ঘিরে যে ভাগবাটোয়ারা প্রক্রিয়ার কথা এতদিন নানা মহলে আলোচনা হচ্ছিল, তা যেন এবার সত্যি হতে চলেছে। বিএনপির ওই ৮০ নেতাকে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের ছকমতো নির্বাচনে নিতে দলটিরই এক ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক এক সাংগঠনিক সম্পাদক ও একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ আলোচিত সংস্কারপন্থি একাধিক নেতা তৎপর রয়েছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র এ তথ্যমতে জানা গেছে।

দলীয় সরকারে অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেও, দলের মধ্যে একটি অংশ ভেতরে ভেতরে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনেক দিন ধরে। সে অংশটি দলের হাইকমান্ডকে এ-ও বোঝানোর চেষ্টা করেছে, সরকার বর্তমানে দেশ-বিদেশে নানামুখী চাপে আছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করা সম্ভব। হিসেব-নিকেশ তাদের পক্ষে থাকলে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতেও পরামর্শ দিয়ে আসছিলো দলের হাইকমান্ডকে। কিন্তু দলের হাইকমান্ডের অনড় অবস্থানের কারণে ওই অংশটি নেপথ্যে থেকে সরকারের ছকে নির্বাচনের রোডম্যাপে হাঁটছে।

দল নির্বাচনে গেলে তারা দলের হয়েই নির্বাচনে লড়াই করবেন। তবে শেষ পর্যন্ত দল যদি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না আসে সেক্ষেত্রে সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে তারা ভোটে অংশ নেবে। প্রয়োজনে তারা পৃথক জোট গঠন করে “জাতীয়তাবাদী” আদর্শের ব্যানারে নির্বাচনের পরিকল্পনা নিচ্ছেন। এসবের পেছনে বেশ কিছুদিন ধরেই কলকাঠি নাড়ছে ক্ষমতাসীনরা।

এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে সংসদে একটি বিরোধীদল গঠনের পরিকল্পনা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বহির্বিশ্বকে দেখানো হবে-বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। এ সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলও রয়েছে। বলা হবে- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দণ্ডিত তাই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। দলের বেশ কয়েকজন নেতাও দণ্ডিত হওয়ায় নির্বাচনে আসতে পারেননি। এমনকি তারা বিএনপির ব্যানারও ব্যবহার করবে এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদেরকে নির্বাচনের জন্য বৈধ মনোনয়ন বোর্ড হিসেবে অনুমোদন দেবে।

দুই শীর্ষ নেতা দণ্ডিত হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ওই ভাইস-চেয়ারম্যানকে দলের চেয়ারম্যানও ঘোষণা করা হবে। দলের নির্বাচনকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে ইসি তাকে বৈধতা দেবে। তিনি ওই ৭২ থেকে ৮০ জন নেতাকে নির্বাচনে নিয়ে আসবেন। এতে ৩০-৩৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। এছাড়া দলে বঞ্চিতদের অনেককেই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দলের দায়িত্বশীল এক নেতা একাধিকবার এ প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া প্রভাবশালী দেশের একজন কূটনীতিকও তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তারেক রহমান তার কাছে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি জানিয়ে দেন- বিএনপির তৃণমূল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ নেতা আরও বলেন, আমরা (নেতারা) যে যাই বলি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কিন্তু প্রতিনিয়তই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না।

এছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক হয়েছে। গেল জুন মাসেও এ বৈঠক হয়। কিন্তু তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হননি। উপদেষ্টা জানান, দলের ৭২ জনকে টার্গেট করে পরিকল্পনা সাজানো হয়। কিন্তু ৩২ জনকে সিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরে তারা ৪০ জনকে টার্গেট করে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। অতীতেও সেরকম হয়েছে।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি বিএনপির কেউ নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে আপনাদের ভূমিকা কি হবে? এমন প্রসঙ্গে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, সে ধরনের কোনো খবর আমি এখন পর্যন্ত শুনিনি। ষড়যন্ত্র সব সময় ব্যর্থ হয়। স্বৈরাচারী সরকার এসব করে গণতন্ত্রকামী মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে রাখে। কেউ এই ফ্যাসিবাদী, অবৈধ সরকারের সাথে যাবে বলে আমার মনে হয় না।

তিনি বলেন, সবসময় ষড়যন্ত্র হয়েছে, বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেছে, তাতে কেউ সফল হয়নি। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সফল হয়নি, এরশাদও সফল হয়নি। শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে সফল হতে পারবেন না। যারা চোরাবালিতে পা দেবে, তারাই হারিয়ে যাবে। এ দেশের তরুণ সমাজ কখনো তা মেনে নেবে না, গণতন্ত্রকামী মানুষ কখনো মেনে নেবে না। তরুণসমাজ সব ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেবে।

তিনি বলেন, সব সময় একই প্রক্রিয়া কাজ করে না। ২০১৪ সালে বিনাভোটে, ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে করেছে আওয়ামী লীগ। এবার নতুন প্রক্রিয়ায় ভোট করতে চাইবে। কিন্তু সরকারের সব খেলা শেষ। এবার আর একতরফা ভোট করতে পারবে না। খোলা কাগজ

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়