সংবাদ১৬ ডেস্কঃ জন্মের এক বছর পরই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় ছোট্ট শিশুটি, গরীব বাবার অভাবের সংসার, চিকিৎসা করানোর মতো তেমন সক্ষমতা ছিলোনা। তবুও মেয়েকে সুস্থ করতে চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি বাবা। কপালের লিখন খন্ডাতে সেই থেকে অচল হয়ে যায় শিশু রিনার দুই পা। প্রতিবন্ধী হয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আজও বেঁচে আছে রিনা। অচল দুই পা, প্রতিবন্ধী সেই শিশু রিনা আজ ২১ বছর বয়সে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কারো দয়ায় নয়, নিজে উপার্জন করে বাকি জীবন কাটাতে চায় প্রতিবন্ধী রিনা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের দামোদরদী এলাকার মোঃ সোবহান মিয়ার মেজো কন্যা রিনা। চার সন্তানের জনক রিনার বাবা সোবহান মিয়া ৭ বছর আগেই মারা যান। রিনার একমাত্র বড় ভাইয়ের পক্ষে বাবার রেখে যাওয়া স্বল্প আয়ের উৎস শরবত বিক্রি করে সংসারের ভরনপোষণ ও বোনের লেখাপড়ার খরচ চালানো খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিবন্ধী রিনা ভাই-বোন ও মাকে নিয়ে অভাবের সংসারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। শিশুকাল থেকে শুরু করে আজ অব্দি মায়ের কোলই তার একমাত্র অবলম্বন। কোলে করে স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র ভরসা রিনার মা। নিয়মিত লেখাপড়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং কোরআন পাঠ করাই যেন রিনার প্রতিদিনের রুটিন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, অবিভাবকহীন সংসারটি নিয়ে করোনাকালিন সময়ে রিনাকে পড়তে হয়েছিলো কঠিন বিপাকে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে কাটাচ্ছিলো দিন। সেই-সময় নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁয়ের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা রিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশে দাড়ান, সাহায্যের হাত বাড়ান। লেখাপড়ায় ব্যবহারের জন্য এমপি খোকা রিনাকে একটি লেপটপ উপহার দেন। সেই থেকে তিনি মাঝেমধ্যে রিনার খোঁজ খবর রাখেন। করোনাকালিন সময়ে সোনারগাঁ থানার তৎকালিন এস আই আবুল কালাম আজাদ মাঝেমধ্যে রিনার খোঁজ খবর নিতেন, আর্থিক সাহায্য করতেন বলেও জানা গেছে।
প্রতিবন্ধী রিনা জানায়, আমি আর কারো দয়ায় বাঁচতে চাই না, ২০১৭ সালে ৪.৪৫ নাম্বার পেয়ে এসএসসি, ২০১৯ সালে ৩.১৭ নাম্বার পেয়ে এইচএসসি এবং বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষে ফাস্টক্লাস রেজাল্ট নিয়ে এখন ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রিনার আকুল আবেদন, তার যোগ্যতানুযায়ী একটি সরকারি চাকুরীর ব্যবস্থা হলে কৃতজ্ঞতার সহিত সুখে স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটাতে পারবে রিনা।
অভাবের সংসার, দায়িত্ব পালন করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রিনার মা। তার মায়ের একমাত্র চাওয়া মেধাবী এই প্রতিবন্ধী সন্তানটি যেন একটি চাকুরী খুঁজে পায়।
রিনার প্রতিবেশী দোকানদার আবুল হোসেন জানান, ছোট বেলা থেকেই রিনাকে চিনি, জানি। মেয়েটার বাবা নেই। ছাত্রী হিসেবেও রিনা অনেক মেধাবী। ভাই-বোন ও মাকে নিয়ে অভাবের সংসার। এতো প্রতিকূলতার মাঝেও মেয়েটা লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তার যোগ্যতানুযায়ী একটি চাকুরীর ব্যবস্থা হলে হয়তো মেয়েটার জীবন স্বার্থক হতো।
আরেক প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রিনা আক্তার আমাদের পার্শবর্তী বাড়ির মেধাবী ছাত্রী। সে ছোট বেলা থেকেই মায়ের কোলে- চড়ে স্কুলে যেতো। বর্তমানে রিনা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। সরকারি সহযোগীতা পেলে মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন কাটাতে পারতো!