শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
spot_img

সাভারে কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর শত শত একর জমি বেদখল

মো: মাইনুল ইসলাম, সাভার ঢাকাঃ ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় বছরের পর বছর ধরে বেহাত হয়ে আছে কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর শত শত একর জমি। এইসব জমি শত বছরের ঐতিহ্যকে রক্ষা করে চলছে। আর এ সমস্ত জমি দখলে নিতে মেতে উঠেছে কিছু প্রভাবশালী মহল। তারা পাকা স্থাপনা করে বহাল তবিয়তে থাকলেও যেন ঘুমিয়ে আছে কোর্ট অব ওয়ার্ডস কর্তৃপক্ষ। এমনই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী অনেকে। কিন্তু তারা কোন অভিযোগের প্রতিকার পাচ্ছে না।

কোর্ট অব ওয়ার্ড এর ঢাকা নওয়াব এস্টেট ও ভাওয়ালরাজ এস্টেটের বেহাত হওয়া জমি কাগজে-কলমে উদ্ধারের কথা জানা গেলেও বাস্তব চিত্রদেখা গেছে ভিন্ন। কোর্ট অব ওয়ার্ডসের কিছু অসাধু-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে এস্টেটের সিংহভাগ জমি বেহাত হয়ে গেছে কিছু প্রভাবশালীদের দখলে। বাস্তবে এসব জমির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে, ঢাকার সাভারে বন বিভাগকে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ৪১২ একর জমি বনায়নের জন্য লিজ দেয়া হয়। কিন্তু বন বিভাগ এই জমিতে বনায়ন না করে তা ব্যক্তি মালিকানায় হাতে তুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । এসব কারণে সাভারের প্রায় সব জমি বে-আইনী দখলদারদের হাতে চলে যায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাভার উপজেলায় ১৫টি মৌজায় কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ১৩শ ৪০ একর জমি রয়েছে বলে ১৯৯৮ সালে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন আব্দুল মালেক নামে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের একজন সদস্য। তথ্যসূত্রে পাওয়া যায় এরমধ্যে কলমা মৌজায় ৩১নং সিএস খতিয়ানে ২০৭.২৫ একর, ভৌমকা মৌজায় ১০নং খতিয়ানে ৩১.৬ একর ১২ খতিয়ানে ৭.১৩ একর, ১৩ খতিয়ানে ১২৭.৪৭ একর, ১৫ খতিয়ানে ৪৭.৮৫ একর, দাসপাড়া মৌজায় ২নং খতিয়ানে ১৬৯.৩১ একর, কুমারখোদায় ২নং খতিয়ানে ১৭৩.৪০ একর, বলিমোহরে ৬নং খতিয়ানে ২৪৭.০৪ একর, আউকপাড়া মৌজায় ৪নং খতিয়ানে ৫৬.৭১ একর, ১৬ খতিয়ানে ১ হাজার ১৯৮.৭২ একর, আইচ্চানেয়াদ্দায় ১৩নং খতিয়ানে ১৫.৫৮ একর, কোন্ডায় ৫৭৬ নং খতিয়ানে ৩.১৮ একর, খাগান মৌজায় ১নং খতিয়ানে ২০.২৫ একর, চৌবাড়িয়ায় ১নং খতিয়ানে ৮৩.০৩ একর, সাদুল্লাপুরে ১৩নং খতিয়ানে ০.৫২ একর, ১০/২ খতিয়ানে ০.৯৩ একর, মোস্তাপাড়ায় ৫.৩১ একর, বাসুটিয়া মৌজায় ২/৩ খতিয়ানে ১৫.৬৯ একর এবং ছোট ওমালিয়া মৌজায় ২নং খতিয়ানে ৭.১৬ একর জমির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু এসব জমির সিংহভাগ দখলে চলে গেছে স্থানীয় প্রভাবশালী, হাউজিং সোসাইটি ও কথিত শিল্পপতিদের হাতে।

রিসোর্ট গোলাপ চাষ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাগজ-পত্রের ফাঁক গলিয়ে অনেকেই ব্যক্তি নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন কোর্ট অব ওয়ার্ডস বা নওয়াব এস্টেটের শত শত একর জমি। অথচ কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি রেকর্ড না করতে মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি অফিসকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এরপরেও লিজ নিয়ে দেদারছে জমি বিক্রি করেছে ভূমি দস্যুরা।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, নদী সিকস্তি পরিবার, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা পরিবার, কৃষি জমি নেই এমন পরিবার, অনধিক ১০ বসতি আছে অথচ কৃষি জমি নেই এমন পরিবার, অধিগ্রহণের ফলে ভূমিহীন হয়ে গেছে এমন পরিবার কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি লিজ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়। লিজ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমানসহ কাগজ-পত্র দাখিল করার নিয়ম রয়েছে। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে জমি লিজ দেয়া যাবে মর্মে উল্লেখ আছে।

কোর্ট অব ওয়ার্ডসের জমি দখল করে এভাবে পাকা স্থাপনা গড়ে উঠছে সাভারের বিরুলিয়ায়। অভিযোগ রয়েছ কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ভূমি লিজ আইনকে উপেক্ষা করে জমি দখল হচ্ছে জালজালিয়াতি করে। প্রভাবশালী জালিয়াতি চক্রের সাথে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বেহাত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। যারা জালিয়াতি করে জমি লিজ নিয়ে ভোগ করছেন তারা অনেকেই প্রভাবশালী কোটি কোটি টাকার মালিক। অনেকেই জনপ্রতিনিধি, হাউজিং সোসাইটির মালিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাবান নেতাও বটে।

এলাকাবাসী জানান, মেহেরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আব্দুস সালাম জালিয়াতি করে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের প্রায় ১ একর ২০ শতাংশ জমি দখল করেছেন। সাভারের শ্যামপুর গোলাপগ্রামে গেলে দেখা যায় সেখানে চারপাশে উঁচু দেয়াল করে তিনি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেখানে নির্মান করেছেন পাকা স্থাপনা।  এব্যাপারে ভুক্তভোগী জনৈক সেলিম চাঁন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে বলে জানান ভুক্তভোগী।

সেলিম চাঁন আরো জানান, কোর্ট অব ওয়ার্ডসের কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী মোটা অংকের টাকা দিতে না পারায় আমাদের লিজকৃত জমি জৈনক এডভোকেট আব্দুস সালামকে দেয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণ বেআইনী। টাকা ছাড়া কোর্ট অবওয়ার্ডসের লোকজন কোন কথাই শুনতে চায় না।

কোর্ট অব ওয়ার্ডসের ম্যানেজার মোহাম্মদ হোসাইন জানান, সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি আছে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের। আর এই সমস্ত জমির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য জরিপ প্রয়োজন। অনেক প্রভাবশালীরা জমি দখল করে আছে তাদের সাথে আমরা পেরে উঠতে পারছিনা।

তিনি বিলেন, তাদের মধ্যে একজন সাভারে জমি দখলকারী আব্দুস সালাম মেহেরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান। কয়েক বছরেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ভুক্তভোগী সেলিম চাঁন তিনি এ  ব্যাপারে অনেক অভিযোগ করেছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখন আর কোর্ট অব ওয়ার্ড  কিছুই করতে পারবে না বলে জানান।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়