সংবাদ সিক্সটিনঃ সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছেনা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি, বাগেরহাট-৪ মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি ড. মিয়া আব্বাস উদ্দিনের শেলক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর। ডা. বিরু চৌধুরীর বড় বোন সেতেরা বেগমের স্বামী মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি মিয়া আব্বাস উদ্দিন।
১৯৯০ সালে মিয়া আব্বাস উদ্দিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দিয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে স্বপরিবারে কানাডায় চলে যান। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর কানাডার অটোয়ায় একটি হাসপাতালে ব্রেইন টিউমার ও বার্ধক্যজনিত রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। কানাডাতেই তাকে দাফন করা হয়।
একাধিক সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি বড় বোন সেতেরার স্বামী মিয়া আব্বাসের কানাডার বাড়িতে অবস্থান করেন ডাক্তার বিরু। যদিও সেখানে যাওয়ার পূর্বে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু কানাডার অন্য একটি স্থানে থাকবেন বলে তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।
লোক মুখে শোনা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি মিয়া আব্বাসের সমস্ত অবৈধ টাকার বিশ্বস্ত ক্যাশিয়ার ছিলেন ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু। সেই সুবাদে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শেলক বিরু চৌধুরী।
উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের উটমা গ্রামের বাসিন্দা আবু জাফর চৌধুরী বিরুর পিতা মৃত নূর মোহাম্মদ চৌধুরী। নূর মোহাম্মদ চৌধুরীর তৃতীয় স্ত্রীর ছেলে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিপন চৌধুরী পার্শ্ববর্তী আমবাগ গ্রামের আরজু দেওয়ানের স্ত্রীর সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। ওই নারীকে নিয়ে কক্সবাজার-সহ দেশের বিভিন্ন রিসোর্টে মনোরঞ্জন করে সময় কাটান, যার অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরালসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।
বিষয়টি নিয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছিল। পরে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করা হলেও সোনারগাঁ-সহ নারায়ণগঞ্জ জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যতার সৃষ্টি করে।
এছাড়া আবু জাফর চৌধুরী বিরুর পিতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন কৃষক শ্রমিক পার্টির সাবেক সভাপতি, কুখ্যাত রাজাকার এস এম সোলায়মানের সহযোগী। এলাকায় প্রচলিত রয়েছে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর পিতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী নিজেও একজন রাজাকার ছিলেন। তার আরেক বোনের স্বামী নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা। আরেক ভাই সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা। যা সময়ে সময়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতো সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসন থেকে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু।
এখানেই শেষ নয়, সকল সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর দুই সহযোগী র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে এক মোবাইল ব্যবসায়ীর ২৮৩ পিস মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার হলে ডা. বিরু ফের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। গ্রেফতারকৃত সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক রবিন ও সাঁজু দুজন’ই ছিলো ডাক্তার বিরুর হাতিয়ার।
উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা কোতয়ালী থানার রাইস গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মোবাইল ব্যবসায়ী মোঃ সুমন তার সহযোগী সাঈদকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ব্রান্ডের ২৮৩ টি মোবাইল সেট (যার বাজার মূল্য ৪০ লাখ ১০ হাজার ৪৫ টাকা) নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা অতিক্রম করার সময় ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সহযোগী/হাতিয়ার সোনারগাঁ পৌর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন ও বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজু, অলিসহ অজ্ঞাত আরো এক ব্যক্তি নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে প্রাইভেট কারের গতিরোধ করে এবং গাড়িতে অবৈধ মালামাল রয়েছে বলে হুমকি প্রদান করে। এক পর্যায়ে তল্লাশির নামে প্রাইভেটকারে উঠে তারা গাড়ীর নিয়ন্ত্রন নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের মারধর করে তাদের সাথে থাকা ২৮৩টি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরিচয় জানতে পেরে ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে মোবাইলগুলো ফেরত নেওয়ার জন্য ধর্ণা দেয়। মোবাইল ফোনগুলো ফেরত না দেওয়ায় ১১ দিন অপেক্ষা করে ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই ব্যবসায়ী সুমন বাদি হয়ে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সহযোগী মাহবুবুর রহমান রবিন, শাহরিয়ার খাঁন সাজু, অলির নাম উল্লেখ করে আরো একজনকে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ওই রাতেই পুলিশ পৌরসভার খাসনগর দিঘিরপাড় রয়েল-রিসোর্টের সামনে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
পরে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় সোনারগাঁসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বত্র ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুকে নিয়ে ফের সমালোচনার ঝর বইছে।
আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা বলছেন, ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর মতো সোনারগাঁ উপজেলায় আরো কিছু নেতা রয়েছে যারা রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসতে মরিয়া। তাদের কারনে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ এখন কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগের অন্তিম সময়ে যাদের মাঠে দেখা যায়নি তাদের পক্ষেতো জনসমর্থন নেই’ই, ডা. বিরুর মতো নেতাদের কোন সাংগঠনিক অস্তিত্বও নেই। তাছাড়া ডাক্তার বিরুর অতীত ঘাটলে সে আওয়ামীলীগের কিছু না বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের সদস্য ডাক্তার আবু জাফর চৌধুরী বিরু’র মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।