শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪

মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যে সংবাদ প্রচারের প্রতিবাদ করলেন মান্নান

সংবাদ সিক্সটিনঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেছেন, আমার জীবনে রাজনৈতিকভাবে কখনো কোন সুবিধা ভোগ করিনি, ভোগ করার চেষ্টাও করিনি। সারাজীবন বিএনপির রাজনীতির স্বার্থে জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে লালন করে নেতাকর্মীদের বিপদে পাশে থেকেছি। নিজের উপার্জনের টাকা ব্যয় করে দল করেছি। ভবিষ্যতেও বিএনপির সাথে আছি, থাকবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আমি ও আমার ছেলে খাইরুল ইসলাম সজিব’ই শুধু নয়, আমার আত্নীয়স্বজনসহ আমরা সবাই বিএনপির রাজনীতি করি।

আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, আমি ও আমার ছেলের বিরুদ্ধে কয়েকটি পত্রিকায় মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর হতাহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় ৬টি মামলা হয়েছে সত্যি কিন্তু ওই মামলার বাদী আমি না, আমার ছেলেও না। সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে ঘটনাস্থল দেখিয়ে এসব মামলা করা হয়। সব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী, সাধারণ ব্যবসায়ী ও দিনমজুরসহ নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে আরও প্রায় চার হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার নেপথ্য কারিগর আমি আজহারুল ইসলাম মান্নান এমনটাই পত্রিকায় লেখা হয়েছে। মান্নান বলেন, এখন কি বিএনপি ক্ষমতায় আছে যে পুলিশ প্রশাসন শুধু আমাদের কথাই শুনবে? এগুলো একেবারেই ভ্রান্তি ও গুজব। সোনারগাঁ থেকেও ৪ জন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য শহীদ হয়েছেন। তাদের পরিবার কি মামলা না দিয়ে বসে থাকবে?

নিরপরাধ মানুষদের মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করে তাদের ঘরবাড়ি দখল, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। এ বিষয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, আমি কারো বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছি এমন রাজনীতি আমার ইতিহাসে নেই। এ ছাড়া ইকোনোমিক জোনে যারা আগে ব্যবসা করতেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঝুটসহ নানা ব্যবসা জোরপূর্বক করে যাচ্ছি আমি ও আমার ছেলে খাইরুল ইসলাম সজীব এগুলো সবই মিথ্যা। উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা মোশারফ, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার আতাউর রহমান, নিজামুদ্দিন, বাবুল ও শামীম এরা পরিবহন চাঁদাবাজ এসব কথা মিথ্যে ও উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সংস্কার পন্থিরা গণমাধ্যম কর্মীদের ভুল তথ্য দিয়ে অপপ্রচার করছে বলেও জানান তিনি। পত্রিকায় লেখা হয়েছে নীরিহ মানুষের জমি দখল করে নিচ্ছে মান্নানপন্থি বিএনপি নেতা মেনা, বারদী এলাকার আব্দুর রহমানসহ বিশাল বাহিনী। এ ব্যপারে আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, কাগজপত্র ছাড়া একজনের জমি কি আরেকজন দখল করতে পারে? এটা একেবারেই হাস্যকর। ক্লিন ইমেজের বিএনপি নেতাকর্মীদের যাদের আমি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করে মিথ্যা মামলায় আসামি করেছি এটা কি বিশ্বাস যোগ্য? সোনারগাঁয়ে আমি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও আমার নেতাকর্মীরা ব্যতীত কোন সংস্কার বাদীরা ক্লিন ইমেজের নেতা হতেই পারেনা! তারা বিগত ১৬ বছর কোথায় ছিলো? এখন ক্লিন ইমেজার নেতা হয়ে গেলো! মান্নান বলেন, আমি নাকি মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছি! অথচ এই আওয়ামীলীগ নেতারাই আমাকে ডজন ডজন মামলা দিয়েছিল, তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন করার প্রশ্নই আসেনা। পত্রিকায় আসে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সোনারগাঁ ইকোনোমিক জোনে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা কামানো ইঞ্জিয়ার মাসুমকে আসামি করার পর নাকি কয়েক কোটি টাকা নিয়ে বাদীকে দিয়ে মামলা থেকে নাম বাদ দিচ্ছি! হাসতে হাসতে মান্নান বলেন, মামলা একবার রুজু হয়ে গেলে কোন আইনে আছে যে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়া যায়? এগুলো কি উদ্দেশ্য প্রনোদিত অপ-প্রচার নয়?

এসব কারণে সোনারগাঁয়ে বিএনপি বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান এবং অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম। মূলত মান্নানপন্থিরাই জড়িয়ে পড়েছে হামলা-মামলা ও বাড়িঘর লুটপাটে। এবিষয়ে মান্নান বলেন, সোনারগাঁ বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত হয়নি, বিভক্ত হয়েছে রেজাউল করিম ও তার সাথে থাকা সংস্কার পন্থিরা। রেজাউল করিম ও তার সুবিধাবাদী দোসররা কোথায় ছিলো দলের অন্তিম সময়ে? আমরা কোন হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করিনি। যতটুকু হয়েছে সংস্কার পন্থিরা সোনারগাঁ বিএনপির নাম ক্ষুন্ন করার জন্য এসব ভাংচুর করেছে। অন্যথায় সোনারগাঁ বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলা থেকে যথেষ্ট ভালো আছে বলেও জানান মান্নান।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক রহিম মাস্টার বলেন, আজহারুল ইসলাম মান্নান এক সময় অধ্যাপক রেজাউল করিমের একজন সাধারণ কর্মী ছিলেন। একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের দালালি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান তিনি। এরপরই বিশাল ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। এবিষয়ে মান্নান বলেন, দলের আদর্শ বুকে নিয়ে কর্মী থেকেই মানুষ নেতা হয়। আমিও সেটাই হয়েছি। আমি কারো দালালী করিনি, একটি কোম্পানির সাথে ব্যবসা করে সেই টাকায় আজীবন রাজনীতি করেছি। আমার কোন সন্ত্রাস বাহিনী নেই বলেও জানান আজহারুল ইসলাম মান্নান।

পত্রিকায় এসেছে গত ৭ আগস্ট আমার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাবেরচর এলাকায় সাবেক মহিলা মেম্বার মমতাজ বেগমের পরিবারের লোকজনকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে তার ভবনসহ জায়গা-জমি জবরদখল করে নিয়ে গেছি! কোথায় নিয়ে গেছি? তার ভবন সেখানেই আছে। এ ব্যপারে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নাকি অভিযোগ হয়েছে। বিগত ১৬ বছর আমার জমি ও বাড়ি দখল করে জোরপূর্বক মমতাজ মেম্বারনী ভবন তৈরি করে রেখেছে, আমি শুধু আমার অধিকারটুকু নিয়েছি। প্রশাসন আসুক, আমার ও তার কাগজপত্র দেখুক যায়গার প্রকৃত মালিক কে প্রমাণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ৫ আগস্ট মেঘনা টোল প্লাজা থেকে টোলের কয়েক কোটি টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আমার ছেলে জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীবের অনুসারিরা। এবিষয়ে মান্নান বলেন, মেঘনা টোল প্লাজায় এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। ৫ আগষ্টের পর বেশ কয়েকদিন টোল থেকে টাকাই উঠানো হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা টোল পাহাড়া দিয়েছে৷ আমাদের ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা তাদের সাথে সহযোগিতা করেছে। এবিষয়ে ফুটেজ আছে, পত্রিকায় নিউজও হয়েছে।

আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, আমার বাহিনী নাকি মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, একথাটা একদম সত্য! ১৬ বছর লুকিয়ে থাকা সংস্কার পন্থিদের জন্য আমি ও আমার বাহিনী ঠিকই মূর্তিমান আতঙ্ক। তিনি বলেন, আমার বাহিনী প্রতাবেরচর গ্রামের মিন্টু, ঝাউচর গ্রামের আল আমিনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমার ভয়ে প্রতাবেরচর, ঝাউচর ও আষাড়িয়ারচর গ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ীরা নাকি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এ নিয়ে নাকি থানায় অভিযোগও হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়নে শীলমান্দি ও পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনাঘাটে অবস্থিত ৩টি ইকোনমিক জোনসহ ৩৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজকর্ম নাকি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি আমি ও আমার ভাইসহ আত্নীয়-স্বজনরা। মান্নান বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি ছিলো, কে কোথায় হামলা ভাংচুর করেছে আমি জানিনা, অযথা আমার নেতাকর্মীদের দায়ী করে সংবাদ প্রচার হয়েছে। প্রথম থেকেই আমি বলে আসছি যারা হামলা ও ভাংচুর করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছি। আমার লোকজন যদি ভাংচুর করতো তাহলে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের বাড়ি আমার বাড়ির পাশেই। যারা অপপ্রচার চালাতে চায় তারা এসে দেখে যান তার বাড়িটাও শির উচিয়ে অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

মান্নান বলেন, আমার নেতৃত্বে প্রতিদিন শতাধিক লোক চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সচেতনামূলক প্রচার চালাচ্ছে। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার ফুটপাতের সব দোকান ও পরিবহণ থেকে কোন চাঁদা তোলা হয়না বলেও জানান মান্নান। পত্রিকায় লেখা হয়, সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউপির অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামীলীগ হওয়ায় তাদেরকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়। এবিষয়ে মান্নান বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি মামলার বাদী কিন্তু আমি নই। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরাই মামলার বাদী হয়েছে। তিনি বলেন, ১৬ বছর বিএনপি ক্ষমতায় ছিলোনা, গুম, খুনতো আর বিএনপি করেনি, মামলাতো আওয়ামীলীগই খাবে নাকি? তিনি বলেন, যেহেতু আওয়ামীলীগের সাঙ্গপাঙ্গরাই বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলো, তারা পালিয়েছে। দেশের খারাপ পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এটা আমার আইন নয়, আমার অধিকারও নয়। জনগনের সেবা নিশ্চিত করার জন্যই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে মেম্বারদের দায়িত্ব দিয়েছে কতৃপক্ষ।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়