শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪

বিএনপি’র লুতফুর রহমান আওয়ামীলীগের আমলে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করতেন বিএনপি। ছিলেন বিএনপি আমলে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। অথচ আওয়ামী লীগের আমলে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সনদ। হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা। বলছিলাম টাঙ্গাইলের লুতফুর রহমান খান আজাদের কথা। যিনি বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্বপালন করছেন।

বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেখানে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা হয়েছে, সেখানে লুৎফুর রহমান আজাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। এমনকি বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। সে সময় মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই সময় তিনি নিজেকে কখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করেননি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাত করে গত ২১ জুন, ২০২২ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটপ্রাপ্ত হন। এ নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় নানা ধরনের মুখরোচক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

আওয়ামীলীগের আমলে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে লুৎফুর রহমান খান আজাদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কোনো চেষ্টা করিনি। ভেবেছিলাম এমনিতেই তালিকায় আমার নাম থাকবে। কিন্তু তখন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আমার নাম ওঠেনি। পরবর্তীতে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, লুতফুর রহমান আজাদ বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে নিজে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি করার অপরাধে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করা হয়েছে। ঘাটাইল পৌরসভা বিএনপি সভাপতি আব্দুল বাসেত করিম একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও শুধু বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে বিএনপির রাজনীতি করেও আওয়ামীলীগের আমলে লুতফুর রহমান আজাদ কীভাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন?

বিগত আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে সারা দেশের নেতাকর্মীরা মামলার জালে বন্দি থাকলেও লুৎফুর রহমান আজাদের বিরুদ্ধে একটিও মামলা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, লুৎফুর রহমান আজাদ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৮ (ঘাটাইল) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনি আসনে যাননি। তার চাচাত ভাই আতাউর রহমান খানকে মাঠ ছেড়ে দিয়ে ওয়াকওভার দিয়েছেন। আতাউর রহমান খান টাঙ্গাইলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমানুর রহমান খান রানার বাবা। সম্পর্কে লুৎফুর রহমান খান আজাদ ও আতাউর রহমান খান চাচাতো ভাই। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, বিএনপির রাজনীতি করেও লুৎফুর রহমান আজাদ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন।

ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও লুৎফুর রহমান আজাদ বিএনপির সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির বহু নেতার নামে মামলা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়ান- ইলেভেনের কুশীলব মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ওই সময় তাকে মামলার ঝামেলায় পড়তে হয়নি।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বিগত ১৫ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে কোথাও অংশগ্রহণ করেননি লুৎফুর রহমান খান আজাদ। রাজনীতিতে সব সময় তিনি সুবিধাবাদী জায়গায় অবস্থান করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন। আবার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরেও তাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি থেকে কয়েকজন নেতার পদ স্থগিত করায় ২০১৩ সালে লুৎফুর রহমান খান আজাদকে টাঙ্গাইলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ পরিবর্তন হলে আবারও টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন লুৎফুর রহমান খান আজাদ। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার ডাকে খুব একটা সাড়া দিচ্ছেন না।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে লুৎফুর রহমান আজাদ তার নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। আন্দোলন- সংগ্রামে না থাকা ও বিপদে নেতাকর্মীদের পাশে না দাঁড়ানোয় তার কর্মকাণ্ড তৃণমূল নেতাকর্মীরা খুব একটা পছন্দ করছেন না।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়