শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
spot_img

মাদক কারবারি গোপালের হাট বিরুলিয়ার খোন্ডা গ্রাম


মো.মাইনুল ইসলাম,সাভার থেকেঃ সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু ওয়ার্ডেই চলছে মাদক কেনাবেচা! এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোস্তাপাড়া, সাদুল্লাপুর, শ্যামপুর আবাসন ও গোলাপ গ্রাম। এছাড়াও কালিয়াকৈর কৃষিবিদ বুমক আক্রান, দক্ষিণপাড়া, দত্তপাড়া, সাইপাড়া বউ-বাজার, বাগ্নিবাড়ি উত্তরপাড়া এবং ছোট্ট গ্রাম খোন্ডা উল্লেখ যোগ্য। খোন্ডা গ্রামটি ইউনিয়নের এক-কোনে এবং আকারে ছোট হলেও মাদক খ‍্যাত গ্রাম হিসেবে রাজধানীর ছোট বড় অনেকের কাছে খুবই পরিচিত।

বেলা ডোবার সাথে সাথে মিরপুর-টঙ্গি গাজীপুর রাজধানীর পুরনো ঢাকা সহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো আর এসব লোকজন আসে শুধুমাত্র মাদক সেবনের জন্য। তারা মাদক সেবনের নিরাপদ স্থান মনে করেন আর এরকম ভাবে মাদক বেচাকেনা চলতে থাকে সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পযর্ন্ত। এসমস্ত মাদক নেশার আড্ডার আয়োজক এবং সংগ্রহকারী গোপাল বাবু। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন গোপালের স্ত্রী, একই গ্রামের সুনিলের ছেলে শিমুল ও সম্ভুর ছেলে গোবিন্দ।

প্রতিবেদক পরিচয় গোপন করে নতুন ক্রেতা হিসেবে গোপালের মুঠোফোনে ফোন দিলে তার স্ত্রী ফোনটি ধরেন এবং নতুন ক্রেতা হিসেবে আগ্রহ দেখিয়ে নিজের থেকে আমাদের সেবা দিতে তিনি বলেন, আপনাদের যেকোনো ধরনের মাল এনে দিতে পারবেন গোপাল। গোপালের কাছে সবধরনের মাল পাবেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম কি কি ধরনের মাল পাওয়া যায়, উত্তরে বলেন বাংলা মদ অর্থাৎ (চোলাই মদ) গাজা, বাবা (ইয়াবা) ফেন্সিডিল যেটা চান সেটাই পাবেন। আপনার গোপাল ভাইকে বলেন, সে বাড়িতে আসলে ফোন দিয়েন। পরদিন আমাদের প্রতিনিধি টিম সরাসরি সাক্ষাৎ করে গোপালের সাথে, সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেয়ে গোপাল আমাদের মুখামুখি হওয়ার সাথে সাথেই নিজেকে সাধু প্রমাণ করার জন্য সাথে তার সহযোগী শিমুল, গোবিন্দ ও তার পরিবারের লোকজন তার পক্ষে সাফাই গাইতে লাগলেন। অবশেষে গোপাল বলেন, আমরা হিন্দু মানুষ এই গ্রামটি নিরিবিলি আর পুরোটা আমাদের হিন্দুদের বসবাস। এখানে বিভিন্ন প্রকার লোকজনের আনাগোনা, গাজীপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন আমাদের এখানে ঘুরতে আসে, তারা সাথে করেই মদ ইয়াবা গাজা নিয়ে আসে। আমি শুধু তাদের একটু খেদমত করি। আমার বাড়ির আঙ্গিনায় বসার জন‍্য একটা পাটি গ্লাস মগ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে দেই। ধরুন আপনি এসে যদি বলেন দাদা আমাদের একটু হেল্প করুন, বসার জায়গা করে দিন। তারা যাওয়ার সময় আমাদের কিছু বকশিস হিসেবে টাকা পয়সা দিয়ে যায়। কিন্তু আমরা মদ গাজা ইয়াবা বিক্রি করি না। যারা এখানে নেশার জন্য আসে তাদেরকে দেখলে আপনিও কিছু বলতে সাহস পাবেন না, পুলিশও কিছু বলতে সাহস পায়না।

গোপালকে নানাভাবে প্রশ্ন করাতে অবশেষে আমাদেরকে চা-নাস্তার খরচ হিসেবে কিছু টাকা দিয়ে ম‍্যানেজ করার চেষ্টা করে ব‍্যার্থ হয়ে বলেন, দাদা এসব লিখে আর কি করবেন? বড়জোর পুলিশ ধরে জেলে দিবে এর চেয়ে তো বেশি কিছু না। জেল ফাঁস পুরুষের জন্যই তো?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খোন্ডা গ্রামের একজন কৃষক বলেন, গোপালের তো তেমন কোন জমিজামা নেই, শুধু ভিটা মাটি ছাড়া! গোপালের কোন কাজ কাম নাই। আমরা দেখি সারাদিন বাড়িতে থাকেন সন্ধ্যা হলে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন আসে গোপালের বাড়িতে। মদ ইয়াবা গাঁজার আড্ডা বসায় সন্ধ্যা থেকে চলে মধ্য রাত পযর্ন্ত। এসব কিছু গোপালের কাছেই পাওয়া যায়, গোপালই বিক্রি করেন।

গোপালের আয়ের উৎস কি? আমাদের প্রতিবেদক গোপালের কাছে জানতে চাইলে কোন সুনির্দিষ্ট পেশা দেখাতে পারেনি। খোন্ডা গ্রামের সাধারণ মানুষ সন্ধ্যা হলেই গোপালের মদের আড্ডার ভয়ে কেউ নিজ নিজ বাড়ি থেকে বের হয় না। কেউ গোপালের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না। গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদে থাকতে এবং গোপাল, শিমুল ও গোবিন্দের মদের আড্ডা থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মাদকের বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান ওপেন হাউজে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশ রয়েছে মাদকের ব‍্যপারে কোন প্রকার আপোষ নেই। মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারলে জেলা ছেড়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ আসাদুজ্জামান।

এ ব‍্যপারে সাভার মডেল থানার ওসি দিপক সাহা বলেন, মাদক ব‍্যবসায়ীরা যতই শক্তিশালী হউক না কেন তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা। আমি বিষয়টি জানতাম না, এখন জানলাম, দ্রত ব‍্যবস্থা গ্রহণ করবো।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়