বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
spot_img

জাদুঘরের নিরাপত্তা প্রহরী মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি এখন কোটিপতি

সংবাদ সিক্সটিনঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সরকারী জমিতে অবৈধভাবে স্থায়ী দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণির বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন ধরে সোনারগাঁ পৌরসভার আদমপুর বাজারে এ দোকান নির্মাণ করছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা নাম ভাঙ্গিয়ে “নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান পৌর মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট” নামে একটি সাইবোর্ড সাঁটিয়ে এ দোকান নির্মাণ করেন। দোকান নির্মাণের ফলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সোমবার সকালে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্বারক লিপি প্রদানসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সোনারগাঁ পৌর প্রশাসককে স্বারকলিপির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

এলাকাবাসীর দায়ের করা স্বারকলিপি থেকে জানা যায়, সোনারগাঁ পৌর এলাকার আদমপুর বাজারে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে প্রতিদিন সকালে শাক সবজি, ফল মূল ও মাছের পাইকারী ও খুচরা বাজার বসে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এ বাজার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ক্রয় করে থাকেন। বাজারে প্রবেশ পথে সরকারী জমি দখল করে  রাতের আধারে মুক্তিযোদ্ধা নাম ভাঙিয়ে দোকান নির্মাণ করার ফলে চলাচলের পথ সরু হয়ে যায়। এতে পুরুষ ও মহিলা চলাচলে এক জনের সাথে আরেক জনের শরীরে শরীরে ধাক্কা লাগার ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এর আগেও মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণি একই বাজারে সরকারী জমি দখল করে তিনটি দোকান নির্মাণ করেছেন। স্থানীয়  মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণে তার এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেননি কেউ। ফলে তিনি দিন দিন বিভিন্ন স্থানে দখল বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারী সম্পত্তি দখল করে নিজের পকেট ভারি করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এসব দোকান নির্মাণ করে ভাড়া হিসেবে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগও রয়েছে।

সরেজমিনে আদমপুর বাজারে গিয়ে জানা যায়, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে সনমান্দি প্রধান সড়কের পাশে ও ঐতিহাসিক পানাম নগরীর পাশে এ আদমপুর বাজার। আদমপুর মাছ বাজারে প্রবেশ পথে দু’চালা টিনের ঘর নির্মাণ করেন। ঘর নির্মাণ স্থানে এর আগে আলাল মিয়া, নকুল দাস ও জসিমউদ্দির নামের তিন ব্যবসায়ী আলু পেয়াজ ও সবজি  বিক্রি করতেন। জোরপূর্বক ওই স্থানে মুক্তিযোদ্ধার নামে একটি সাইনবোর্ড সাটিয়ে দখল করে নেন।

আদমপুর বাজারের আলু পেয়াজ বিক্রেতা আলাল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখল হওয়া স্থানে ব্যবসা করে আসছি। রাতের আধারে মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণি হঠ্যাৎ করে একটি সাইনবোর্ড দিয়ে দোকান দখল করেন। সকালে এসে তার দু’চালা একটি ঘর দেখতে পাই। এর আগে রজ্জব আলী সহ এলাকার প্রভাবশালীরা বাজারের অধিকাংশ জমি দখল করে স্থাপনা নির্মান করেছেন। এতে প্রান্তিক চাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম ভোগান্তীর শিকার হচ্ছেন।

এলাকাবাসীরা জানান, মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি এক সময় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকুরি করতেন। এখন তিনি ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে চলাচল করেন। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাঙিয়ে সরকারী সম্পত্তি দখল করে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত টাকা তিনি একাই ভোগ করেন। এখন তিনি প্রায় কোটি টাকার মালিক। যেখানেই তিনি সরকারী সম্পত্তি পড়ে থাকতে দেখেন সেখানেই মুক্তিযোদ্ধার নামে সাইনবোর্ড সাটিয়ে দখল করে নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণির কাছে মুক্তিযোদ্ধা ও  মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক পরিবার কুক্ষিগত। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে তিনি অর্থ নিয়ে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে তার ব্যক্তিগত একটি কিন্ডারগার্টেন গড়ে তুলেছেন। তার বাড়ি সরকারী খালের ওপর নির্মিত। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সরকারী সম্পত্তি দখলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণি জানান, অর্পিত সম্পতিতে আদমপুর বাজারে সকল দোকান গড়ে উঠেছে। জমি লিজ পাওয়া জন্য আবেদন করেছি। কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি ইউএনওর কাছে আবেদন না করে ডিসির কাছে করতে উল্টো পরামর্শ দিয়ে রাগান্বিত হয়ে উঠেন।

সোনারগাঁ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাশরেকুল আলম জানান, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে দৈনিক বাজার থেকে খাজনা তুলতে ইজারা দিয়েছি। স্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণের কোনভাবেই সুযোগ নেই। তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ দোকান নির্মাণ করেছেন।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ওসমাণ গণি নামের এক ব্যক্তির নামে এলাকাবাসী দোকান নির্মাণের অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আইনগত ভাবে দেখভালের জন্য এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারী সম্পত্তি অবৈধভাবে কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়