সংবাদ সিক্সটিনঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বর্ষপঞ্জিকা মতে বৈশাখের প্রথম দিনে শতবর্ষী বটবৃক্ষের নিচে সিদ্ধেশ্বরী পূজার আয়োজন করা হয়। সংসারে শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং স্বামী সন্তানদের মঙ্গল কামনায় নারীরা দল বেঁধে সেখানে পূজা দিয়ে থাকেন। ঢাকের তালে ভক্তিভরে উলুধ্বনির সঙ্গে পূজায় মগ্ন হন বধূরা। গাছতলায় মাটি দেন, পাঠা বলি দেন আর এই পূজাকে কেন্দ্র করে সেখানে বসে তিন দিনব্যাপী মেলা। স্থানীয়ভাবে সেই মেলাকে বলে বউ মেলা।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার জয়রামপুর গ্রামে বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী রূপে এই পূজার প্রচলন ঘটে প্রায় একশো বছর আগে। পরে বংশ পরম্পরায় পালিত হয়ে আসছে এই পূজা। তবে শুরুর দিকে শুধুমাত্র বাড়ির নববধূদের নিয়ে এই আয়োজন হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন বয়সের নারীরা সমাজের মঙ্গল কামনায় এবং পরিবারের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য এতে অংশ নেন। শতবর্ষী বট গাছটিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন।

এ গাছটি সিদ্ধেশ্বরী কালীতলা নামে পরিচিত। কিন্তু এলাকায় এটাকে বলা হয় বউ-গাছ-তলা। অসংখ্য নারীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠা এই মেলার নাম বউ মেলা। মেলায় পুরুষরাও অংশ নেয়, তবে সংখ্যায় কম। প্রতি বছরের মতো এবারও সিদ্ধেশ্বরী কালীতলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজার আয়োজন করেছে। নারীরা মৌসুমী ফল নিয়ে লাইন ধরে বটগাছ তলে ভোগ দিচ্ছেন। মৌসুমী ফলের স্তুপ জমে উঠেছে গাছতলায়।

পূজা অর্চনা শেষে স্তুপকৃত ফল ভক্তবৃন্দের মধ্যে প্রসাদ হিসেব বিতরণ করা হয়। স্বামী-সংসারের বাঁধন যেন আমৃত্যু অটুট থাকে সেই কামনাতেই পূজার আয়োজন। পূজার পরপরই শুরু হয় তিন দিনব্যাপী বউ মেলা।

পূজার আয়োজক নিলুৎপল রায় বলেন, শুরুর দিকে এখানে পুরুষরা আসতো না, এই পূজা শুধুমাত্র বউদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। জামাইদের নিমন্ত্রণ করা হতো তারা মেলায় আসতেন, তবে তারা পূজায় অংশ নিতেন না। তাই তখন থেকেই এই মেলা বউ মেলা নামে পরিচয় লাভ করে। নববর্ষের প্রথম দিনে দেশবাসীর মঙ্গল কামনায় এই পূজার আয়োজন। নতুন বছর যেন ভাল কাটে, সবাই যেন ভাল থাকতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি তাই এই পূজার আয়োজন করা হয়। প্রায় একশো বছর ধরে এই পূজা চলছে।

মেলা প্রাঙ্গণে বাঁশের বাঁশি, মাটির হাতি, ঘোড়াসহ মৃৎশিল্পের নানা সামগ্রী ও ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী খাবার খই, উড়খা, কদমা, পেঁয়াজু, নিমকি, জিলাপিসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসে। এছাড়া শিশুদের জন্য নাগরদোলাসহ বেশ কিছু রাইডের ব্যবস্থা করেন আয়োজকরা। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই মেলাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন। ঐতিহ্যবাহী বউ মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় বৈশাখী উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।