কাজী মোস্তফা রুমি, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহেও হাড়ভাঙা পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন কৃষক। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানুষের জন্যে খাদ্য সরবরাহ করা কৃষকের অবদান শোধ করার মতো নয়। বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষক যেমন অধিক ফসল উৎপাদন করছে, ফসলের নতুনত্বের সফলতায় তাক লাগিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় রঙিন ফুলকপি চাষ করে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বরুরিয়া গ্রামের কৃষক রিপন মিয়া (২৮) ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২বছর আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে রিপন মিয়া ৭-বন্ধুকে নিয়ে সেভেন ষ্টার এগ্রো ফার্ম নামে ৪একর জমিতে ফুলকপি, শশা, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়ার চাষ শুরু করেন। এবছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে জামালপুর থেকে ২ হাজার রঙিন ফুলকপির চারা সংগ্রহ করে, ২০ শতাংশ জমিতে সাদা ফুলকপির পাশাপাশি বেগুনি ও হলুদ রঙের ফুলকপির চাষ করেন। এতে তার সেচ, পরিবহন ও জৈব, রাসায়নিক সারের খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার টাকা।
রঙিন ফুলকপি ব্যাপক চাহিদা থাকায় ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং প্রতিটি কপির ওজন হয়েছে দেড় থেকে ২ কেজি। এতে এক লাখ টাকার উপরে বিক্রি মূল্য আসবে বলে জানান রিপন মিয়া।
রিপন মিয়া বলেন, কৃষি প্রজেক্ট শুরুর পর রঙিন ফুলকপি চাষে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছি। প্রতিদিন গ্রামের ৫/৬ জন নারী কাজ করছে আমার এখানে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি এটাও আমার আনন্দ। দুর দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক কৃষক আগ্রহ নিয়ে নতুন এই ফুলকপি দেখতে আসছে। অনেকেই আগামীতে এই কপি চাষের আগ্রহী দেখাচ্ছেন। ধনবাড়ী ও মধুপুরের আড়তে এগুলো বিক্রি করা হয়।
অটো রিকশা চালক আ. লতিফ জানান, যখন এগুলো বাজারে নিয়ে যাই, সবাই তামাশা দেখতে আসে এতে অনেক আনন্দ পাই। চাষাবাদের কাজে সহায়তা করা রহিমা বেগম (৫৫) বলেন, এই কপি অনেক ভালো সেদ্ধ হয় ও স্বাদ অনেক, প্রতিদিন অনেক মানুষ এগুলো দেখতে আসছে।
বরুরিয়া গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান তালুকদার বলেন, আগামী বছর আমিও এই রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী। যদি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চারা পাই তবে আমিও রঙিন ফুলকপি চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, রঙিন ফুলকপির মধ্যে বিটা কেরোটিন এবং এন্টি অক্সডিন্টে থাকার কারণে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। আগামীতে এই কপির চাষাবাদ বাড়াতে কৃষককে প্রয়োজনীয় সকল পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
উল্লেখ্য, এ জাতের কপি রোপণের ৮০/৮৫ দিনের মধ্যে বিক্রি করা যায় এবং সাধারণ কপির মতোই চাষাবাদ করতে হয়, শুধু জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়।