সংবাদ ডেস্কঃ শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে, কিছু এনজিও তার শত শত প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস- এমনকি জাতিসংঘেরও প্রতিবেদন রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে প্রত্যাখ্যান করছে।
মানুষের ওপর নির্যাতন বেড়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে, সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে, প্রতিপক্ষকে গুম করা হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা এবং হত্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের নির্যাতন শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপরই হয়নি, বরং ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে গত ১৭ মে লেখা এক চিঠিতে তারা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন থামাতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনের সর্বোচ্চ সুযোগ দেওয়ারও অনুরোধ জানাচ্ছি।
চিঠিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর হিন্দুদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাদের উপর হামলা, মন্দির ও বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তর করার কারণে হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে খৃস্টান সম্প্রদায়ের ওপরও নিপীড়ন চালানো হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার মানুষ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছে। এই প্রতিবাদীদের একটাই প্রত্যাশা, শেখ হাসিনার সরকার যাতে বিদায় নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের গুম-খুন-নির্যাতনের মূল হোতা, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) অসংখ্য প্রতিবাদীকে গ্রেপ্তার করেছে। খুন করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অসংখ্য এনজিও র্যাবকে সরকারের ডেথ স্কোয়াড হিসেবে অভিহিত করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি ডয়চে ভেলে ও নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, র্যাবের প্রাক্তন সদস্যরা স্বীকার করেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন ছাড়া বিচারবহির্ভূত এসব হত্যাকাণ্ড এবং জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটানো সম্ভব না।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বছর আগে র্যাবকে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্যাংশন জারি করেছে। এরপরও শেখ হাসিনার সরকার জনগণের উপর নিপীড়ন জোরদার করেছে। গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এই সরকারের পিছিয়ে পড়া এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ঠেকাতে র্যাবের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়।
বলা হয়, দেশের জনগণের প্রতি শেখ হাসিনার এই অপরাধ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য খারাপ “অ্যাক্টরকে” উৎসাহিত করছে। তারা একত্রিত হচ্ছে এবং চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে আঘাত করছে।
কংগ্রেসম্যানরা বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ অবাধ নির্বাচনের সর্বোত্তম সুযোগটি পাক। এই জন্য ব্যক্তিভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সামরিক বাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ করছি। চিঠিতে সই করেছেন স্কট প্যারি, বব গুড, ব্যারি মুর, টিম বার্শেট, ওয়ারেন ডেভিডসন ও কীথ শেলফ। সূত্র: আমাদের সময়.কম