সাকিব হোসেইনঃ কুমিল্লার তিতাসে মসজিদের জমি নিয়ে বিরোধে একের পর এক সংঘর্ষ হামলা মামলা, বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার রাত ১টায় উপজেলার দক্ষিণ বলরামপুর সরকার বংশের মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহাপরান এর একটি টিনের বসতঘর ভাংচুর এবং আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে ভূইয়া বংশের শেখ সাব গংদের বিরুদ্ধে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ বলরামপুর গ্রামে থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং সাধারণ এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক কাজ করছে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, সরকার বাড়ি ও ভুইয়া বাড়ির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের জায়গা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এক মাস ধরে তিন দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের অত্যন্ত ১০ জন আহত হয় এবং উভয় পক্ষের মামলা চলমান রয়েছে। শেখ সাবের বাড়ির সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে মসজিদের এই জায়গা নিয়ে আজ এতবড় দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে বলে জানা যায়। গ্রামের সচেতন সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিচার সালিশ করার পর এর সমাধান হয়নি। এ রকম কর্মকান্ড নিয়ে আমরা গ্রামবাসী আতঙ্কে আছি যে কোন সময় দুই বংশের লোকজনের মধ্যে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
এ বিষয়ে সরকার বংশের প্রবাসী শাহ পরানের স্ত্রী শেপী আক্তার বলেন, ভূইয়া বাড়ির শেখ সাব গংদের সাথে মসজিদের জায়গা নিয়ে আমাদের এক মাস ধরে মারামারি ও মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। আমরা মামলা গুলো যাতে তুলে নেই এনিয়ে অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে আমাদের পরিবারকে। তারই জের ধরে আজ শুক্রবার (২৬শে মে) রাতে ভূইয়া বাড়ির শেখ সাবের ছেলে বাবু এবং তার আত্মীয় বড় বাড়ির আজহার, মুকবুল মেম্বার, দুলাল ও আলাল সহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জন লোক লোহার রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে আমাদের বাড়ির একটি বসতঘর ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলেছে এবং আমার মা বিউটি বেগম বাবুকে দেখে ফেললে তাকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় পরে চিৎকার শুনে আগুন দেখে আশে পাশের লোকজন মসজিদে মাইকিং করলে এলাকাবাসী এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তারা এ ঘটনার আগে আরেকবার আমার গায়েও হাত দিয়েছে। ঘরের জানালার কাচ, শো-কেস ভাংচুর করে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এবিষয়ে আমাদের একটি মামলা ও চলমান রয়েছে। আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না তাদের আত্যাচারে। এ ঘটনার আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।
সরকার বংশের প্রবাসী শাহাপরান জানান, মসজিদের এ জায়গা নিয়ে কিছুদিন আগে আমার বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট করে এবং আমার স্ত্রী শরীরে হাত তোলে। যার মামলা চলমান আমি প্রবাসে থাকি আমার স্ত্রী বাচ্চা আমার মা তাদের ভয়ে এ বাড়িতে থাকে না রাতে পাশের বাড়িতে থাকে। এর কিছুদিন পর তারা টাকার জোরে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে আমাদের নামে বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটের একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে ৪৫জনকে আসামী করেছে। যে ঘটনা নিয়ে মামলা দিয়েছে তার পেক্ষিতে তিতাস থানা প্রশাসন বলেছিল সমাধানের আগে মজিদের পাশে যেনো আর কোন প্রাচীর দেয়াল না তুলে কিন্তু তারা প্রশাসন এর কথা না শুনে আবারও টিন দিয়ে বেড়ি দিয়েছে বাড়ির সামনের জায়গাটি আজ আবার আমার ঘড়ে আগুন দিয়েছে মামলা না তুলে নেওয়ায়।
আউয়াল সরকার বলেন, মসজিদের জায়গা নিয়ে কিছুদিন পরপরই আমাদের উপর হামলা চালিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে শেখ সাবের পরিবার এর আগে আমার উপর হামলা চালিয়ে রড দিয়ে আঘাত করে আমার ৭টি দাঁত ফেলে দেয়। এখন আবার আমার মেয়ের বসতঘড়ে আগুন লাগিয়ে ঘড়টি পুড়ে ফেলেছে।
মসজিদের ক্যাশিয়ার মুকবুল হোসেন বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে একের পর এক হামলা করছে ভূইয়া বাড়ির শেখ সাবের পরিবারের লোকজন। তাদের আতঙ্কে আমরা বাড়ি ছেড়ে পাশের বাড়িতে থাকি সেই সুযোগে তারা গতকাল প্রবাসী শাহাপরান এর বসতঘরে আগুন লাগিয়ে ভাংচুর করে ঘরটি পুড়ে ফেলে।
এ বিষয়ে শেখ সাবের স্ত্রী বলেন, আমরা টাকা দিয়ে তিন শতক জায়গা কিনেছি। জায়গটি আমরা দখলে আছি সরকার বাড়ির লোকজন কয়েকদিন আগে জোরপূর্বক আমাদের ওয়াল ভেঙ্গে ফেলেছে এবং একটি দুচালা টিনের ঘর ভেঙ্গে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। তারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন দিয়েছে আমাদের নামে মামলা দেওয়ার জন্য। আমার ছেলে বাবু ঘর থেকেই বের হয়নি, সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করেন। দেয়াল এর বিষয়ে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন জী প্রশাসনের নিষেধ ছিল কিন্তু আমার বাড়ির মেয়েদের চলতে অসুবিধা হয় তাই দিয়েছি।
অভিযুক্ত শেখ সাবের আত্মীয় ইউপি সদস্য মুকবুল হোসেন বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা আমি তাদের আত্মীয় বলে তারা আমাকে দোষারোপ করছে অন্যথায় কোন কারন নেই। এবিষয়ে তিতাস থানায় যোগাযোগ করা হলে, জানা যায় এখনও পর্যন্ত কোন মামলা বা কোন অভিযোগ হয়নি।