নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকার সাভারে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুঁড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুমের নেতৃত্বে দলবল মিলে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় নগদ ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেছেন অভিযুক্তরা।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী সহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ৪ জনকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ২ জনকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (৬ মে) বিকেল ৫ টায় সাভার পৌরসভার আনন্দপুর এলাকার বিসমিল্লাহ ওয়াস ফ্যাক্টরি নামক ওই প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবিতে এই হামলা চালায়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোঃ ইউসুফ আলী চুন্নু বাদী হয়ে সাভার পৌর শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি এবং পৌরসভার নামাগেন্ডা এলাকার হোসেন আলীর ছেলে মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম (২৫) সহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অপর অভিযুক্তরা হলেন, সাভার পৌরসভার নামাগেন্ডা এলাকার ইমান আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর হোসেন ওরফে টেন্ডার আলমগীর (৩০), চাঁপাইন এলাকার বাসিন্দা ও ধর্ষণের অভিযোগে সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সোহেল রানা ওরফে ধর্ষক রানা (৩৩), নামাগেন্ডা এলাকার হাবু মিয়ার ছেলে নাদিম দেওয়ান ওরফে গুন্ডা নাদিম (২৪), উলাইল এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে টিপু ওরফে বালু টিপু (২৮), কাতলাপুর এলাকার বাসিন্দা বাবু ওরফে রড বাবু (২৮), একই এলাকার পলাশ ওরফে খাটা পলাশ (৩০), মজিদপুর এলাকার বাসিন্দা পাভেল ওরফে চাঁদাবাজ পাভেল (৩৫), নামাগেন্ডা এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে সজীব (২৪)। এছাড়াও অভিযোগ পত্রে অজ্ঞাত আরো ১২ জনকে আসামী করা হয়েছে।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চাঁদাবাজির ব্যাপারে লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম সহ প্রত্যেকে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের অনুসারী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত একমাস যাবত সাভার পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লার বিসমিল্লাহ ওয়াশ ফ্যাক্টরিতে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম বাহিনীর সদস্যরা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় শনিবার বিকেলে মাসুমের নেতৃত্বে ওই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে অভিযুক্তরা। চাঁদার বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী মোঃ ইউসুফ আলী চুন্নুকে চর থাপ্পর মারতে থাকে সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সোহেল রানা ওরফে ধর্ষক রানা।
পরে ওই ব্যাবসায়ীর ছেলে আবির তার বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে সাভার পৌর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে আঘাত করে আবিরের বাম চোখের নিচে ফাটা রক্তাক্ত যখন করে। বাবু ওরফে রড বাবু তাহার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আবিরকে এলোপাথারি মারতে থাকে এতে তার বাম হাতের হার ভেঙ্গে যায়।
বাবা ও ছেলের ডাক চিৎকার শুনে ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী চুন্নুর স্ত্রী রত্না ও ছোট ভাই নান্নু তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে নাদিম দেওয়ান ওরফে গুন্ডা নাদিম তার হাতে থাকা গ্যাসের লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ব্যবসায়ী চুন্নুর ছোট ভাই নান্নুর বাম হাত ভেঙে যায়। ওই সুযোগে পাভেল ওরফে চাঁদাবাজ নান্নুর পরনের পাঞ্জাবির পকেট থেকে নগদ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে।
শুধু তাই নয় গুন্ডা নাদিম ব্যবসায়ী চুন্নুর স্ত্রী রত্নাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। ঘটনা দেখার পর ওই ব্যবসায়ীর ভাতিজা বাহাদুর এগিয়ে আসলে বাবু ওরফে রড বাবু ও পলাশ ওরফে খাটা পলাশ তাকেও এলো পাথারি কিল ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এতে বাহাদুরের ডান চোখের নিচে ফাটা রক্তাক্ত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। এ সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আলমগীর ওরফে টেন্ডার আলমগীর ছিনতাই করে।
চিৎকার চেঁচামেচিতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে মাসুম দেওয়ান ওরফে মুরগি মাসুম তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে ২ রাউন্ড ফাকা গুলি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। অবশিষ্ট বাকি টাকা না দিলে ভুক্তভোগীদের হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
ঘটনার পর থেকে সাভার পৌর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান সহ অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে মাসুম দেওয়ানকে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, চাঁদার দাবিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় লিখিত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।