স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জ জেলাকে যানজট নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করছে জেলা ট্রাফিক বিভাগ। ঢাকার নিকটবর্তী জেলা হওয়ায় অতিরিক্ত পরিমাণ যানবাহনের চাপ থাকে। যার কারণে এই জেলায় শহরের মধ্যে রয়েছে চারটি রেকার। যাদের দায়িত্ব পালন করছেন একজন এটিএসআই ও একজন রেকার কনস্টেবল ড্রাইভার।
এছাড়া রেকার দলে রয়েছেন চার থেকে পাঁচজন করে সদস্য। যারা দিন পরিশ্রমিকে কাজ করেন। ক্রমান্বয়ে তাদের বেতন দৈনিক ৫০০ থেকে বারোশো টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। ব্যাটারিচালিত অবৈধ অটোরিকশা, মিশুক, বড় অটো সহ ব্যাটারি চালিত ভ্যান প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শহরে প্রবেশ করলেই অবৈধ ব্যাটারি চালিত যানবাহন গুলো আটক করে রেকার বিল করা হয়। এ সকল অবৈধ যানবহন গুলোকে আটক করে রেকার বিল করলেও আটক করা বা রেকার বিল হয় না ব্যাটারি চালিত ভ্যানের। যার কারনে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। আর পকেট ভরছে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা।
সরেজমিনে চাষাড়া মোড় থেকে লিংক রোড ও শিবু মার্কেট এলাকায় দেখা যায়, রেকার অপারেটর এটিএসআই বাশার তার দল নিয়ে অবৈধ ব্যাটারি চালিত যানবাহন গুলো আটক করেন। এরমধ্যে কিছুসংখ্যক ব্যাটারি চালিত ভ্যান আটক করেন। কিন্তু ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা গুলোকে বিল করার জন্য ডাম্পিংয়ে নিয়ে আসা হলেও ব্যাটারি চালিত ভ্যান ডাম্পিংয়ে আনা হয় না। ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় প্রতিমাসে সমপরিমাণ টাকা মানতি দিতে হবে তাহলেই শহরে অবৈধ ব্যাটারি চালিত ভ্যান প্রবেশ করতে পারবে। আর না হলে গাড়ি ধরে প্রতিনিয়ত রেকার বিল করার হুমকি দেয়া হয়। কাগজে এটিএসআই আবুল বাশারের নাম এবং তার ব্যক্তিগত বিকাশের মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকে।
শিবু মার্কেটের এক ভ্যানচালক বলেন, রেকারে গাড়ি ধরছে ৫০০ টাকা দিছি কিন্তু কোন সরকারি রশিদ দেয় নাই। রশিদের পরিবর্তে হাতে এক টুকরা কাগজ ধরায় দিছে। কাগজে কি লেখা আছে জানতে চাইলে ভ্যানচালক বলেন স্যারের নাম আর নাম্বার দিছে প্রতিমাসে যেন ৫০০ টাকা কইরা বিকাশে দিয়া দেই এর জন্য। যদি না দেই তাইলে শহরের রাস্তায় উঠতে পারুম না।
এটিএসআই আবুল বাশারকে মানতি দেয় ব্যাটারি চালিত ভ্যান গাড়ি চালক হাফিজুল, হানিফ, রুহুল আমিন, বাবুল, জাহিদুল, বিপ্লব, হাবিব, আলমগীর, জাবেদ, রমজান সহ কয়েকজন চালক জানান, আমরা গরিব মানুষ মানতি না দিলে প্রতিদিনই গাড়ি ধরবো। তাই মানতি দিতে হয়। এটিএসআই আবুল বাশার স্যারের কাছে মানতি করা। ৫০০ টাকা করে প্রতিমাসে মানতি দেই। মানতি কিভাবে দেয় জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, কেউ সামনাসামনি গিয়ে আবার কেউ বিকাশ নাম্বারে মানতির টাকা পাঠিয়ে দেয়।
এছাড়া বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এটিএসআই আবুল বাশারের প্রায় ১৫০টির বেশি ব্যাটারি চালিত ভ্যান মানতি করা আছে। যারা প্রতিমাসের ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা তার বিকাশ নাম্বারে পাঠিয়ে দেয়।
আরো কয়েকজন ভ্যান চালক জানান, গাড়ি ডাম্পিংয়ে নিয়ে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিল করা হয় না। বিল না করেই টাকা রেখে দেয় এবং তার সাথে যারা গাড়ি ধরে তাদের মাধ্যমে এক টুকরা কাগজ পাঠায় যার মধ্যে নাম ও নাম্বার লেখা থাকে। এবং ভ্যানচালকের নাম মোবাইল নাম্বার সহ গ্যারাজের নাম লেখা রাখে। যেন পরের মাসের টাকা না দিলে গাড়ি ধইরা আইনা বিল করতে পারে।
এ বিষয়ে এটিএসআই আবুল বাশারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার হাতনা শুধু, আমার সবকিছুই লম্বা। আপনাকে তো আগেই বলেছি আমার টাকা পয়সার কোন গাড়ি নেই। দু’একটা পরিচিত লোক আছে। এখন এক জায়গায় আসলাম এক লোক বলতাছে স্যার একটু বইলা যাইয়েন আমি আসমুনে। তিনি সাংবাদিককে আরো বলেন, আপনি লেইখা রিপোর্ট দিয়া দিয়েন যে আমার (আবুল বাসার) এর ২০০ গাড়ি ৩০০ গাড়ি আছে। আপনি এমন লেখা রিপোর্ট দিলেই কি তাহলে আমার কি চাকরি চলে যাবে?