সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ বিদেশী ফুল ‘গ্লাডিওলাস’ চাষ হচ্ছে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানা ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ নামে পলিনেট হাউজে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত কৃষি খামার। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বছরব্যাপী নিরাপদ উচ্চমূল্যের ফসল ও চারা উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তার কৃষি খামারে ২৫ শতক জমির উপর স্থাপন করা হয়েছে একটি পলিনেট হাউজ।
এই পলিনেট হাউজের পাঁচ শতক জমিতে যশোর থেকে ছয় হাজার টাকায় ১৫ শ’ পিস কন্দ কিনে পরীক্ষামূলক গ্লাডিওলাস ফুল চাষ শুরু করেন সোহেল রানা। কন্দ রোপণের মাত্র দুই মাসেই ফুল ফুটতে শুরু করেছে। খামারে উৎপাদিত ফুলগুলো প্রায় ১২ হাজার টাকায় বিক্রির আশা করছেন তিনি।
সরেজমিনে পলিনেট হাউজে গিয়ে চোখে পড়ে লাল, সাদা, গোলাপি, বেগুনী, কমলা, হলুদসহ নানা রঙের ফুল। উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ এই প্রথম। সাফল্য আসায় এই ফুল নতুন কৃষি সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। বাহারি রঙের নজরকাড়া গ্লাডিওলাস মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার ফুল। এই ফুল সংগ্রহ করার পর প্রায় ১০-১২ দিন ধরে রূপ ছড়াতে থাকে বলে এই ফুলের কদর বাড়ছে দিন দিন। বর্তমানে সাপাহার বাজারে বিয়ে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাজসজ্জা এবং জাতীয় দিবসে ফুলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে যশোর থেকে আসা ফুলে। অনেক দূরের উৎপাদনস্থান থেকে আসা এই ফুল পরিবহনের সময় কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ফুলের সৌন্দর্য আর ঠিক থাকে না। ফলে এই উপজেলায় ফুলের দামও অনেক বেশি পড়ে।
জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, স্থানীয় বাজারে গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে যশোর থেকে কন্দ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করি। বর্তমান বাজারে প্রতিটি ফুলের স্টিক ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ফুলের স্টিক ফুল ব্যবসায়ীদের কাছে ৭ থেকে ৮ টাকায় পাইকারি বিক্রি হবে। বিশেষ দিনগুলোতে বড়তি দামও পাওয়া যেতে পারে। অনেক দর্শনার্থী বাগানে ঘুরতে এসে পছন্দমত রঙের ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ফুলের শোভা চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি তাজা ফুলের চাহিদা মেটাচ্ছে। এই ফুল চাষে অন্যান্য ফসলের মত খুব বেশি পরিচর্যা করা লাগে না। একটি গাছ থেকে একটি ফুল এবং তিন থেকে চারটি কন্দ পাওয়া যায়। ফলে ফুল বিক্রির পাশাপাশি চারাও বিক্রি করেও আয় করা সম্ভব। স্থানীয় বাজারে গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা পূরণসহ বাড়তি আয়ের চিন্তা থেকে এই ফুল চাষ শুরু করি। বর্তমানে সব গাছগুলোতে ফুল আসতে শুরু করেছে। গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রির পর কন্দ বিক্রি করা যাবে। ফলে এই ফুল চাষে চাষিরা আগ্রহী হলে খামার থেকে কন্দ বা চারাও সরবরাহ করা হবে বলেও জানান সোহেল রানা।
সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাপলা খাতুন বলেন, পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদনে সব ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। এই উপজেলার মাটি গ্লাডিওলাস ফুল চাষের উপযুক্ত না হলেও সোহেল রানা তার পলিনেট হাউজে ফুল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। আগ্রহী চাষিরা কারিগরি ও চাষবিষয়ক সঠিক পরামর্শ নিয়ে যথাযথ ভাবে মাটি তৈরি করে এই ফুল চাষ করতে পারবেন। ফলে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ এই অঞ্চলে চাষিদের সামনে আয়ের এক নতুন সম্ভাবনা বলে এই কর্মকর্তা মনে করছেন।