মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
spot_img

এই সুন্দর জীবনের ইতি টানবে মৃত্যু, আমরা কি প্রস্তুত?

সংবাদ১৬ ডেস্কঃ  মৃত্যু এমন এক বাস্তব, যা প্রতিদিন আমাদের আশপাশে মহল্লায় হচ্ছে। আমাদের চর্মচক্ষু এসবের সত্যতার সত্যায়িত। দিন-রাতই প্রত্যক্ষ করছে। উপলব্ধি করছে। মৃত্যু এমন এক সত্য যা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কোনো বৈজ্ঞানিক আজো পর্যন্ত শত চেষ্টা করেও মৃত্যু থেকে বাঁচার কোনো পথ আবিষ্কার করতে পারেনি। মৃত্যু আসবেই আসবে। এটাই চরম বাস্তব সত্য।

আল্লাহতায়ালা তার পবিত্র মহিমান্বিত কালাম, কোরআনে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। এ একটি আয়াতই আমাদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট।

মৃত্যু আমাদের সবচেয়ে সুন্দর জীবনের ইতি টানবে। সমাপ্তি ঘটাবে। এ পৃথিবীর প্রতি দৃষ্টিপাত দিলে মনে হয়, মৃত্যুর কথা কারোর স্মরণে নেই। মৃত্যুর কথা মনে হয় না। তারা জানেই না যে, মৃত্যু নামক নির্ধারিত এক পেয়ালা আমাদের সর্বস্তরের মানুষ, জিন, পশু-পাখি , জীব-জন্তু, সবাইকেই তা পান করতে হবে। অথচ আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, সবাই যেনো দুনিয়া কামাই করতে ব্যস্ত। আমরা টাকার পেছনে লাগামহীনভাবে ছুটছি, অঢেল সম্পদ জমা করছি, বড় বড় অট্টালিকা তৈরি করছি। অস্থায়ী দুনিয়াতে স্থায়ী বাসস্থান গড়ার স্বপ্ন দেখছি, প্রতিনিয়ত এবং প্রতিটা সময়। আমাদের একটিবারও কি মৃত্যুর কথা মনে হয় না।
মৃত্যু নিয়ে মানুষের গবেষণার যেনো শেষ নেই।

মৃত্যুকে মানুষ কখনো জয় করতে পারেনি সেটা বাস্তব কথা। মৃত্যু এক বাস্তব সত্য। অস্বীকার করা সম্ভব নয়। আপনি পৃথিবীতে এমনো বহু লোক পাবেন, যারা কোরআন অস্বীকার করছে। আবার এরকম অসংখ্য লোকও পাবেন যারা নবী-রাসুলগণকে অস্বীকার করছে অথবা যারা আল্লাহ মানে না, জান্নাত মানে না, জাহান্নাম মানে না। কিন্তু এমন কাউকেই পাবেন না যে মৃত্যুকে অস্বীকার করছে।

আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, তোমরা যেখানেই অবস্থান কর না কেন, মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই করবে। যদিও তোমরা শক্তিশালী মজবুত কেল্লার মধ্যেও অবস্থান করো। (সুরা নিসা, আয়াত-৭৮) অর্থাৎ মানুষ মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য যতই মজবুত কেল্লার ভেতর নিজেকে আবদ্ধ রাখুক না কেন, মৃত্যু কোনো অবস্থাতেই তার পিছু ছাড়বেনা। কেননা সবার জন্যই মৃত্যুর সময়-কাল নির্ধারিত, নিরূপিত, এ থেকে বাঁচা কখনোই সম্ভব নয়। জাহান্নাম থেকে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু মৃত্যু থেকে নয়। জীবমাত্রই মৃত্যু অনিবার্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের স্পর্শ করবেই।

এক আরব কবি বলেছেন, জীবন সে কয়েকটি চোখের পলকের নাম, অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কালই জীবন। তাই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মুমিন মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেবে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা পাঁচ জিনিসকে পাঁচ জিনিসের আগে গনিমত (সম্পদ) মনে করো।

১. যৌবনকে বার্ধক্যের আগে। আল্লাহতায়ালার দরবারে যুবক বয়সের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ যৌবনের টগবগে সময়ে একজন তরুণের মাঝে এক ধরনের কামনা, বাসনা, উত্তেজনা আবার চরম হতাশা কাজ করে। আল্লাহর বিধান ও পরকালের সীমাহীন জীবনের সুখ-শান্তির কথা মনে থাকে না। নবীজি বলেন, যে যুবক-যুবতী যৌবনে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকবে, আল্লাহতায়ালা তাকে আরশে পাকের ছায়া তলে আশ্রয় দান করবেন। (সহীহ বুখারি, হাদিস নং-৬৮০৬)

২. অসুস্থতা আসার আগে সুস্থতাকে মর্যাদা দাও। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে মর্যাদার দেওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে মুমিন মুসলমানকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি (সা.) বলেছেন, অসুস্থ হওয়ার পূর্বেই সুস্থতাকে কাজে লাগাও।

৩. সচ্ছলতাকে কাজে লাগাও অভাবের আগে। কারণ অনেক সময় সচ্ছলতা থাকে কিন্তু আমরা সেই সচ্ছলতাকে অবহেলা করে কাটিয়ে দেই। যখন অভাব আসে তখন ও-ই কাজ করার জন্য উঠে পড়ে লাগি। এইজন্য আল্লাহর রাসুল বলছেন, সচ্ছলতাকে যথাযথ সঠিক কাজে লাগাতে অসচ্ছলতা আসার আগেই।

৪. অবসর সময়কে ব্যস্ততার আগে কাজে লাগাও। একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি, হাদিস নং-২৩২৯)

৫. মৃত্যু আসার আগে। মারা যাওয়ার আগেই তোমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাও। মৃত্যু যেমন অপরিহার্য, তেমন অনিশ্চিত তার সময়কাল। কেউ জানে না কখন তার মৃত্যু হবে। তাই মুমিন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে সব সময়। (মুস্তাদরিকে হাকিম, হাদিস, হাদিস নং-৭৮৪৬)

পরিশেষে বলবো, আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মৃত্যুর জন্য বেশি বেশি চিন্তা ফিকির করা ও মৃত্যুর জন্য সদাসর্বদা প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুক। যা কিছু ওপরে বলা হয়েছে, সেগুলোর ওপর প্রথমে আমাকে আমল করার তাওফিক দান করুক, সাথে সাথে আপনাদেরকেও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন-আমিন।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়