বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
spot_img

উৎকোচ না পেয়ে খনন কাজ বন্ধ করে দিলো উপজেলা প্রকৌশলী আরজুরুল হক

সংবাদ১৬.কমঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের অলিপুরা খাল খননে প্রকৌশলীকে বাজেটের ৩০শতাংশ টাকা উৎকোচ না দেওয়ার কারনে খাল খননকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার বিকেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরজুরুল হকের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে খাল খনন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

চিঠি পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার থেকে অলিপুরা খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যরা খনন কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে ওই এলাকায় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আরজুরুল হকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় সংসদ সদস্য ও নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি নারায়ণগঞ্জ এর মৌখিক নির্দেশ মোতাবেক খাল খনন কাজে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া এবং জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারনে কাজটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হলো। এ চিঠি সংশ্লিষ্ট ৯ জনকে অনুলিপি প্রদান করা হয়। তবে সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের মধ্যে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বরং খাল খনন কাজ বন্ধ রাখার কারনে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার সনমান্দিকে কৃষি প্রধান ইউনিয়ন নামে সকলের চেনা ও জানা। এ ইউনিয়নের উৎপাদিত সবজি ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যে রপ্তানি হয়ে থাকে। এ ইউনিয়নের বিভিন্ন খালগুলো পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা দখল করে রেখেছেন। এ খালগুলো খননের মাধ্যমে দখল মুক্ত করে কৃষকের কৃষি উৎপাদনে কাজ করার জন্য সরকারী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র অর্থায়নে আড়াই কোটি টাকা খাল ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। আড়াই কোটি টাকার মধ্যে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে খাল খনন ব্যয় হবে। এছাড়াও ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সুইচগেট, ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যে দ্বিতল অফিস ও দুটি কালভার্ট ব্রীজ নির্মাণ করার দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্রটি নাদিম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে কাজটি পেয়েছেন। খাল খনন শেষে সুইচগেট, দ্বিতল ভবন ও ব্রীজ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে অলিপুরা খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যরা ইতোমধ্যে অলিপুরা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে খাল খনন কাজ শুরু করে। গত ২৩ জানুয়ারী শুরু হয়ে সেই খাল খনন কাজ করা হচ্ছে। এতে করে ওই এলাকার কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। হঠ্যাৎ উপজেলা প্রকৌশলীর চিঠিতে সেই খনন কাজ বন্ধ রাখা হয়।

সরেজমিনে খাল খনন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ভেকু সেখানে কর্মহীনভাবে পড়ে রয়েছে। কোন খনন কাজ হচ্ছে না। পাশ্ববর্তী এলাকায় কয়েকজন কৃষক জানায়, এ খালটি খনন হলে সারা বছর খালে পানি ধরে রাখা সম্ভভ হবে। এ খালের পানির মাধ্যমে ইরি, বোরো ও চার ফসলি সবজি উৎপাদন সহজ হবে।

কৃষকদের দাবি, ইঞ্জিনিয়ারের রোষানলে পড়ে আমাদের কৃষকদের আশা আকাঙ্খার প্রতিফল বিঘ্ন হচ্ছে। এ খাল খনন হলে এলাকার কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। খাল খনন কাজ বন্ধ হয়ে গেলে কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়ন হবে না। তাছাড়া এখানে খাল খনন শেষে সারা বছর পানি ধরে রাখার জন্য সুইচগেট নির্মাণ হবে। পানি ব্যবস্থাপনার জন্য অফিস ও কালভার্ট নির্মাণ হবে। সরকারী কর্মকর্তার রোষানলে কৃষকদের স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে।

অলিপুরা এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, খাল খনন শুরু হয়েছে শুনে খুব উৎসাহ পেয়েছি। শুষ্ক মৌসুমেও আমরা এ খালের পানি দিয়ে আবাদ করতে পারবো। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির কারনে হয়তো আশা পূরন হবে না।

মারুবদী এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের প্রাণের দাবি ছিল খাল খনন। এ খাল খনন শুরু হওয়ার পরই বন্ধ হয়ে গেল। আশা পুরনের অনেক বাধা বিপত্তি সব কৃষকের মধ্যে। এ বাধা বিপত্তি শেষ না হলে হয়তো আশা পূরণ হবে না।

অলিপুরা খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ মিয়া বলেন, খাল খননের আগে সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী আমাদের পরিচালনা কমিটির লোকজনকে ডেকে বন্দর ও আড়াইহাজার উপজেলার খাল খননের ৩০ শতাংশ টাকা ওই এলাকার প্রকৌশলীকে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তাকে এ প্রকল্প থেকে এ টাকা দিতে হবে। আমরা টাকা দেওয়ার বিষয়ে কোন কথা বলিনি। তাই তিনি কৌশলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখানে খাল খননের কোন প্রকার বাধা বিপত্তি নেই।

অলিপুরা খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সাহাবুদ্দিন সরকার বলেন, প্রকৌশলীর দাবিকৃত উৎকোচ না দেওয়ায় তিনি জমির জটিলতা দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন মনে হয় টাকা দিলে এ কাজ চলমান থাকতো। রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে এ অঞ্চলের কৃষকদের কোন ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আরজুরুল হক বলেন, চিঠিতে সব লিখে দিয়েছি। এখানে আমার পুনরায় কিছু বলার নাই। উৎকোচ চাওয়ার বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা না বলে সরাসরি কথা বলার জন্য অফিসে যেতে বলেন।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজওয়ান উল ইসলাম বলেন, সরেজমিনে গিয়ে খাল খনন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কৃষকের ভাগ্যের কথা কেউ চিন্তা করেন না। যারা বিত্তশালী তারাই কিভাবে আরো বিত্তবৈভকের মালিক হবেন সে চিন্তায় ব্যস্ত।

তিনি বলেন, খাল খনন কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে চিঠি ইস্যু হয়েছে জেনেছি। এখনো আমার কাছে সেই চিঠির অনুলিপি আসেনি। চিঠি পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিনের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা দেওয়ার পরও কোন সাড়া মেলেনি।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়