বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩, ২০২৪

ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা সোনারগাঁয়ে সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ’র সমাধি

সংবাদ১৬.কমঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ’র সমাধি। তার প্রকৃত নাম আজম শাহ। যিনি ইলিয়াছ শাহ বংশের তৃতীয় নৃপতি। ছিলেন একজন কবি, সাহিত্য প্রেমি, সাধু দরবেশ, অনুরাগী ও একজন বিদগ্ধপন্ডিত। তবে, বাংলার ইতিহাসে স্বাধীন ও ন্যায়বিচারক হিসেবে যে সুলতানের নাম সমগ্র পরিচিত, তিনিই হলেন সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ।

ইতিহাস বলছে, নিজ পিতা বাংলার শাসনকর্তা সিকান্দার শাহ্কে পরাজিত করে ১৩৭৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে গিয়াস উদ্দিন বিমাতার চক্রান্তের কথা জানতে পারেন এবং পান্ডুয়া থেকে পালিয়ে সোনারগাঁয়ে আসেন। সিংহাসন আরোহনের পর সুলতান গিয়াস উদ্দিন নামে উপাধী লাভ করেন। তিনি সোনারগাঁয়ে একটি জাঁকজমক পূর্ণ দরবার ও বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করে সোনারগাঁ এবং সাতগাঁও শাসন করতে থাকেন। শাসন করাকালে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ সোনারগাঁয়ে ১৪০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

১৪১০ সালে তার সমাধিটি কালো স্বেত পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে তার সমাধিটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের শাহচিল্লাপুর গ্রামে অবস্থিত। সমাধিটি কালো স্বেত পাথরে হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এটি কালাদরগাহ নামেও বেশি পরিচিত। গিয়াসুদ্দীন আযম শাহের মাজার সংলগ্ন এ মাজারটি তার প্রধান সেনাপতি কাজি সিরাজ উদ্দিনের বলে ধারণা করা হয়। তার মাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত এ মগদীঘি এবং সংযোগ এ খালটি ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে আরম্ভ হয়ে তার মাজারের পাশ ঘেঁষে দমদমা (দুর্গের) খাল বা বলেশ্বর খালে পড়ে এবং শাহী শহর মোগরাপাড়ার সাথে যুক্ত হয়েছে। আরেকটি সংযোগ খাল মাারখালী নদী থেকে এসে কাইকারটেক ভাটিপাড়া দারগোল্লা হয়ে সুলতানের ভিটা পর্যন্ত এসেছে। ধারণা করা হয়, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সময় তার প্রাসাদের ফটক সম্ভবত এখানেই ছিল।

সুলতানের ভিটায় বর্তমানে সোনারগাঁ ইসলামী মিশন কার্যালয় অবস্থিত। যে সুলতানের ভিটা বা ইসলামিক মিশনটি ২২ বিঘা জমি লাখেরাজ সম্পত্তি বা সুলতানের প্রাসাদ ছিল বলে মনে করা হয়। সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ ১২ থেকে ১৩ বৎসর সোনারগাঁ শাসন করেন। এ সময় তিনি তার সুরক্ষিত রাজধানীর প্রয়োজনে একটি বিশাল সেনাবাহিনীও গঠন করে এবং সুরক্ষিত রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছিলেন কিন্তু সেই রাজ প্রাসাদের পরিধি কতটুকু ছিল তা বলা কঠিন। তবে, শতশত বছর ধরে স্থানীয়রা এ স্থানটিকে সুলতানের ভিটা বলেই জানেন। স্থানটি কৃত্রিম খাল দ্বারা সুরক্ষিত এবং কৃত্রিম খালের দু’পাশে রাজকর্মচারীদের বাসস্থান, এ ধরনের মনোরম পরিবেশে মগদীঘি বা খালের পাশে সুলতান গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সমাধি থাকা বিচিত্র কিছুই নয়। যদিও স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে এ খালটির স্থান পরিবর্তন করে দখলে নিয়ে নিয়েছে।

১৩৮৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে সোনারগাঁয়ে থাকাকালীন সুলতান গিয়াস উদ্দীন ইরানের বিখ্যাত কবি হাফিজকে দাওয়াত করেছিলেন সোনারগাঁয়ে আসার জন্যে। কিন্তু কবি হাফিজ সোনারগাঁ আসতে পারেননি। তবে, সুলতানের জন্যে একটি গজল পাঠান। গিয়াস উদ্দিন তিনজন পত্নীকে কাব্যিক তিন নাম সরভ, গুল ও লালা নামে ডাকতেন। সুলতান ওই তিন পত্নীকে আদর করতেন বেশ। হেরেমের অন্যরা ওই তিন পত্নীকে নিয়ে ঠাট্টা করতো। সুলতানের মেজাজ যখন প্রফুল্ল ছিল ঐ তিন পত্নী একদিন সুলতানকে ঠাট্টার কথা বলেন। সুলতান সাথে সাথে একটি ফার্সি কবিতা রচনা করেন। কিন্তু সুলতান কবিতাটির দ্বিতীয় লাইনটি আর রচনা করতে পারেনি। তার সভার কোন কবিও পারলেন না। সুলতান এ রচনাটি লিখে একজন দূত মারফৎ ইরানের শিরাজ শহরে কবি হাফিজের নিকট পাঠিয়ে দেন। কবি হাফিজ সাথে সাথে দ্বিতীয় লাইনটি লিখে আবার সুলতানের দরবারে পাঠান।
গিয়াসুদ্দীন আযম শাহ যখন সোনারগাঁয়ে অবস্থান করেছিলেন তখন সুলতান এবং কাজীর বিচারের কাহিনীটি সম্ভবত সোনারগাঁয়েই হয়েছিল বলে অনুমান করে।

বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতানের এ মাজারটি প্রত্বতত্ত¡ অধিদপ্তর ১৯২০ সালে পুরাকৃর্তি হিসেবে নথিভুক্ত করেন। এ কাজটি করেই যেন সরকার তার দায়িত্ব শেষ করেন। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোন ব্যবস্থা নেননি। তবে, স্থানীয় একজন ব্যক্তি সুলতানের ভালোবাসায় উদ্ভুদ্ব হয়ে নিজ উদ্যোগে এ সামাধিটি দেখবাল করছেন। স্থানীয়রা মনে করেন পুরাকৃর্তি অনুযায়ী সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ এর সমাধিটিকে আরও নিরাপত্তার পাশাপাশি পুরো সুলতানের ভিটাকে অবৈধ দখল মুক্ত করে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়