শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
spot_img

লোকজ মেলায় শোভা পাচ্ছে মাটির তৈরি খেলনাগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শুরু হওয়া মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের শোভা বাড়াচ্ছে মৃৎশিল্পের খেলনা-পুতুল। মাটির নান্দনিক কারুকার্য ও বাহারি নকশার মাধ্যমে রং তুলির আচড়ে মৃৎশিল্পিরা খেলনা-পুতুলগুলো ফুটিয়ে তুলছেন দারুণ ভাবে। যা দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন নানান বয়সি মানুষ। লোকজ এই উৎসবে অন্যান্য ঐতিহ্যের মধ্যে এক ভীন্ন রকম শোভা পাচ্ছে মাটির তৈরী খেলনাগুলো।

লোককারুশিল্প ফাউন্ডেশনের মেলা চত্বরে অবস্থিত প্রদর্শীত কারু পল্লীর গ্যালারীর সামনে গেলেই চোখে পড়ে মৃৎশিল্পের স্টল। সেখানে দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে মাটির তৈরী হাতি, ঘোড়া, পাখি, গরু, ঘর, খাট, নৌকা, পুতুল ইত্যাদি ইত্যাদি খেলনা ও ঘর সাজানোর শো-পিছ।
লোকজ উৎসবে প্রদর্শীত কারু পল্লীর গ্যালারীতে স্থান পাওয়া কিশোরগঞ্জের মৃৎশিল্পের স্টলের কর্ণধার হরিদাস পাল ও তার ছেলে খোকন পাল জানান, পূর্বপুরুষের পেশা হিসেবেই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত তারা। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় মাটির বাসন-কোসন, সরা, সুরাই, হাঁড়ি-পাতিল, পেয়ালা, মটকা, পিঠা তৈরির ছাঁচ ইত্যাদি তৈরি করে আসছেন দীর্ঘকাল যাবত। এই শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো পরিষ্কার এঁটেল মাটি। বাড়ির মহিলারা তাদের কাজে সহযোগিতা করেন। তবে কালের বিবর্তনে চিনা মাটি ও প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে এবং খরচ বেশি, বেচা বিক্রিও তেমন নেই বিধায় দেশীয় এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। কাজের সেই জৌলুস ও ব্যস্ততা এখন আর নেই। বাঁচার তাগিদে অনেকেই বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ ধরে রাখলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তারাও জর্জরিত। কুমারদের সহযোগিতা করার কেউ নেই।

বর্তমানে উৎসব পার্বনে মাটির তৈরী শখের হাড়ি, খেলনা-হাতি, ঘোড়াসহ নানান পুতুল, বাহারি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। শখের হাড়ি, পুতুল তৈরীর জন্য চৈত্রের শুরুতে কাজের খুব ব্যস্ততা থাকে। বাকি সময় কাটে টিলেঢালাভাবেই। মাসব্যাপী এই লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন ৫ বছর যাবত। বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি ভালো। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্র ও শনিবার বিক্রি ভালো হয়। বর্তমানে মাটির বাসন-কোসন, সরা, হাঁড়ি-পাতিলের চেয়ে পুতুল বিক্রি করে কিছুটা চলা যায়। মেলায় গড়ে প্রতিদিন ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হয়।

মৃৎশিল্পের স্টলে অনেক ক্রেতাই জানান, আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। শুধুমাত্র শিল্প নয় আবহমান গ্রাম-বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যও এটি। নান্দনিক কারুকার্য ও বাহারি নকশায় কুমাররা দক্ষ হাতে ফুটিয়ে তোলেন তাদের শিল্পকর্ম।

পরিতাপের বিষয়, আজকাল মাটির তৈরি জিনিস আগের মতো আর আমাদের চোখে পড়ে না। বলা যায়, বাঙালির ঐতিহ্য মাটির শিল্প যেন দিন দিন কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত জরুরি এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করে মৃৎশিল্প সম্পর্কে নবীন প্রজন্মকে জানানো প্রয়োজন। আর না হলে অচিরেই মৃৎশিল্প স্থান লাভ করবে শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায়।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়