কাশিয়ানী প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে চলতি শিক্ষা বছরের সরকারি বিনামূল্যের বই হকারদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ২৩ জানুয়ারি সোমবার কাশিয়ানী উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গ্রাম পুলিশ মুজিবুরকে পাঠিয়ে বইগুলো জব্দ করেন। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বাংলা, ইরেজি, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, ক্যারিয়ার শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, চারুপাঠ, কৃষি শিক্ষা, আনন্দপাঠ, গার্হস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের সর্বমোট ২০৬ টি বই রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগবন্ধু বিশ্বাস সোমবার দুপুর ২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেন। এরপর তিনি গোপনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের সরকারি বিনামূল্যের বইগুলি ৩০ টাকা কেজি দরে জাহাঙ্গীর ও কাউছার শেখ নামের দুই ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করেন।
স্থানীয় লোকজন সরকারি বইগুলো ফেরিওয়ালাদের কাছে দেখতে পেয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বইগুলো কিনেছেন বলে জানান।
বই ক্রেতা ফেরিওয়ালা কাওছার শেখ জানান, তিনি বইগুলো শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগবন্ধু বিশ্বাসের কাছ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি বই কিনেছেন।
স্থানীয় মোঃ নাহিদ জানান, সোমবার দুপুরে আমি বাড়ি ফেরার পথে স্কুলের সামনে ভাঙারি বোঝাই ফেরিওয়ালাদের একটি ভ্যান ও দুইজন লোককে দেখতে পাই। সেখানে তাদের অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে তারা এই স্কুল থেকে কিছু বই কিনেছে বলে জানান। বইগুলো দেখতে চাইলে তারা উপস্থিত লোকজনের সামনে বইগুলো দেখান। বইগুলোর গায়ে ‘২০২২ শিক্ষাবর্ষ’ ও ‘২০২৩ শিক্ষাবর্ষ’লেখা রয়েছে। পরে এলাকাবাসী বইসহ তাদেরকে আটক করে এবং ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি জানানো হয়। পরবর্তীতে ইউএনও স্যারের নির্দেশে গ্রাম পুলিশের কাছে বইগুলো হস্তান্তর করা হয়।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে বই বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো বই বিক্রি করিনি। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, আমি আপনার সাথে এসে দেখা করব।
কাশিয়ানী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম বলেন, আমরা বিক্রি করা বইগুলো জব্দ করেছি। প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছি। ৩ দিনের মধ্যে ওই প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি এবং গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে ঐ বইগুলো জব্দ করা হয়েছে। সরকারি বই বিক্রির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোপালগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, অভিযোগে বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এই বই বিক্রির ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
