বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
spot_img

অছাত্রদের মাদ্রাসায় লেখাপড়া অচল-শিক্ষকদের বেতন সচল

সাপাহার প্রতিনিধিঃ কাগজ কলমে একটি মাদরাসার মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীর ক্লাসে করছে একজন। গত সোমবার সরেজমিনে গিয়ে এমনটাই দেখা গেছে, নওগাঁর সাপাহার উপজেলার মুংরইল মহিউদ্দীন পাগলা পীর ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসায়।

স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার মুংরইল মহিউদ্দীন পাগলা পীর ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসায় ২৪ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারী রয়েছে। মাদরাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা খুবই কম। শিক্ষা ব্যাবস্থা ও পাঠদান নিয়েও প্রশ্ন আছে স্থানীয়দের মনে। স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সচল রাখতে সরকারি নীতিমালা ঠিক রাখার লক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকার অছাত্রদের শিক্ষার্থী দেখিয়ে মাদরাসার রেজিষ্টারে শ্রেণী ভিত্তিক ইচ্ছামতো নাম অন্তর্ভুক্ত করে রেখে প্রতিষ্ঠান পরিচানলা করা হচ্ছে। এক শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণীতে যে নামগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সে নামগুলো প্রতি বছর শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই নামগুলো পরবর্তী শ্রেণী ভিত্তিক রেজিস্টার ভুক্ত করা হয়। মাদরাসাটিতে প্রথম শ্রেণী হতে দ্বাদশ শ্রেণীতে সর্বমোট ৫৪২ জন শিক্ষার্থী দেখিয়ে ২৪ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারী প্রতিমাসে সরকারি কোষাগার থেকে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৯৫৯ টাকা বেতন উত্তোলন করছেন। যার মধ্যে শ্রেণী ভিত্তিক প্রথম শ্রেণী মোট শিক্ষার্থী ৩৭ দ্বিতীয় শ্রেণী ২৭ তৃতীয় শ্রেণীর ৩৮ চতুর্থ শ্রেণী ৩৫ পঞ্চম শ্রেণী ৩০ ষষ্ঠ শ্রেণী শিক্ষার্থী ৫৫ সপ্তম শ্রেণী ৪৫ অষ্টম শ্রেণী ৩০ নবম শ্রেণীর ৪৫ দশম শ্রেণী ৩৫ একাদ্বশ ও দ্বাদশ শ্রেণি দুটি বর্ষের ৭৪ জন শিক্ষার্থী ফাজিল তিন শিক্ষাবর্ষসহ পরীক্ষা না হওয়া অতিরিক্ত একটি বর্ষে মোট ৯১ জন শিক্ষার্থীসহ মাদরাসায় সর্বমোট ৫৪২ জন শিক্ষার্থীর হিসাব দেখানো হয়েছে। কিন্তু মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায় সম্পূন্ন ভিন্ন চিত্র। মাদরাসার প্রথম শ্রেণী হতে ফাজিল পর্যন্ত সকল শ্রেণীকক্ষ ঘুরে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় দুইজন ব্যক্তি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রায় অর্ধশত বিঘা জমিজমা সম্পদ থাকলেও নেই তেমন শিক্ষার্থী। সরকারি বিধি মোতাবেক ৪ টা পর্যন্ত মাদরাসা খোলা থাকার কথা থাকলেও দুপুর ১ টা হলেই পাওয়া যায় না কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। এতে করে শুধু সরকারের অর্থ ধ্বংস হচ্ছে কিন্তু আমাদের ছেলে মেয়েদের কোন উপকারই হচ্ছে না।

মুংরইল মহিউদ্দীন পাগলা পীর ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে উপস্থিত না হলেও সময়মতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

বিষয়গুলো নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুল কবির এর সাথে কথা হলে, তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ সরকারের করোনা পরবর্তী একটি মহতী উদ্যোগ ইউনিক ডাটা এন্টি ব্যবস্থাকরণ, আইইআইএমএস প্রকল্পের আওতায় সিআরভিএস ব্যবস্থার আলোকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল ডেটাবেজ প্রণয়ন ও ইউআইডি দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায় থেকে স্টুডেন্ট প্রোফাইল ডেটাবেজে সফটওয়ারের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি কাজ চলমান রয়েছে। বিষয়টি আমি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবগত করেছি। যদি কোন প্রতিষ্ঠান এই সমস্ত ডাটা এন্টি না করে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তি দেখায় তাদের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরো দেখুন
Advertisment
বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে জনপ্রিয়